গাজীপুর প্রতিনিধি: গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর তুরাগ তীরে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হচ্ছে তাবলিগ জামায়াতের বার্ষিক মহাসম্মেলন বিশ্ব ইজতেমা। এবার ২ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপ এবং মাঝে চার দিন বিরতি দিয়ে ৯ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। প্রস্তুতির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। শীত উপেক্ষা করে ইজতেমা ময়দানে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি এসে দলে দলে ভাগ হয় স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন। নিচু জমি ভরাট, সামিয়ানা টানানো, রাস্তাঘাট মেরামত ও পয়ঃনিষ্কাশন কাজ চলছে দ্রুতগতিতে।

প্রথম পর্বে মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীদের ইজতেমা ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ৪ তারিখ আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে। মাঝে ৪ দিন বিরতি দিয়ে মাওলানা সা’দ অনুসারীরা দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেবেন ৯ ফেব্রুয়ারি। ১১ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয়।

তুরাগ তীরে প্রায় ১৬০ একর জমির ওপর তাবলিগ জামাতের সদস্যদের থাকার জন্য বিশাল চটের প্যান্ডেল তৈরির কাজ প্রায় শেষ। বিশাল ময়দানে জেলা অনুযায়ী খিত্তাভিত্তিক চলছে মাইক বাঁধা এবং বৈদ্যুতিক তার ও বাতি টাঙানোর কাজ। তুরাগ নদে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তৈরি করছেন পল্টুন ব্রিজ। যা দিয়ে সাময়িকভাবে মুসল্লিরা এপার থেকে ওপারে যাতায়াত করতে পারবেন। ইজতেমার মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য টঙ্গীর তুরাগ নদের উপরে ছয়টি ভাসমান সেতু তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এর মধ্যে পাঁচটি নির্মাণ করেছে সেনাবাহিনী আর একটি তৈরি করছে বিআইডব্লিউটিএ।

এছাড়া গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ১২টি উৎপাদন নলকূপে ১২ কিলোমিটার পাইপ লাইনের মাধ্যমে প্রতিদিন বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে। প্রায় আট হাজার অস্থায়ী টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ময়দানের চাহিদা মোতাবেক ব্লিচিং পাউডার সরবরাহ ও ২৫টি ফগার মেশিনে মশক নিধনেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। মঞ্চ নির্মাণ, মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোণে টিনের চালা ও বিদেশি মেহমানদের আবাসন ব্যবস্থা ইটের গাঁথুনির দেওয়াল দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। মুসল্লিদের সুবিধার জন্য খাবার পানি, অজুখানা, গোসলখানা সংস্কার, বাথরুম ও কাঁচা-পাকা টয়লেট সংস্কার, ইটের সলিং করা রাস্তা তৈরি ও পুরনো ভাঙাচোরা রাস্তা-ড্রেন সংস্কার করা হয়েছে। বিদ্যুৎ লাইন, গ্যাস লাইন, বাঁশের খুঁটি বসানো, নামাজের দাগ কাটা, মাঠের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারসহ প্যান্ডেল সাজগোজের কাজ চলছে।

বিদেশি মুসল্লিদের নিরাপত্তার জন্য পুরো বিদেশি ছাউনিটি আলাদাভাবে তৈরি করা হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমার মুরুব্বীদের গুরুত্বপূর্ণ বয়ান তাদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে শুনানোর ব্যবস্থাও থাকছে। বিদেশি ছাউনির পূর্ব পাশে তৈরি করা হচ্ছে মূল বয়ান মঞ্চ। নিরাপত্তার দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

সাভার থেকে শতাধিক মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে এসেছেন স্বেচ্ছায় কাজ করতে। তাদের মধ্যে রাকিবুল হাসান বলেন, ইসলামের কাজ করতে এসেছি, যাতে আল্লাহ খুশি হয়ে আমাদের গুনা মাফ করে দেন। আল্লাহকে রাজি-খুশি করার লক্ষ্যেই এখানে কাজ করছি।

ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে আসা রিয়াজুল ইসলাম বলেন, অনেক পাপ জমা হয়েছে। এখন থেকে আল্লাহর দেখানো রাস্তায় চলব। ইজতেমার কাজে অংশগ্রহণ করেছি, যেন সকল ভুলত্রুটি আল্লাহ মাফ করে দেন। আল্লাহর রাস্তায় কাজ করলে আল্লাহ খুশি হবেন।

উল্লেখ্য, ২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ফজরের নামাজের পর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। আগত মুসল্লিরা জেলাওয়ারী খিত্তায় অবস্থান করবেন। প্রতি বছরের মতো এবারও উর্দু ভাষায় বয়ান করা হবে এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মুসল্লিদের সুবিধার্থে বয়ানের সঙ্গে বাংলা ও আরবি ভাষায় তরজমা করা হবে।

গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. খায়রুজ্জামান জানান, ইজতেমা ময়দান ও শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে মুসল্লিদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কার্যক্রম প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। রোগী পরিবহনের জন্য সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবাকেন্দ্রে প্রায় ১৫টি অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন থাকবে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি প্রায় শেষ। দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। এখন কোনো সমস্যা নেই। কোনো ক্রমেই হকার বসতে দেওয়া হবে না। এবারের দুই পর্বেই ইজতেমায় ছয় হাজার পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। পুলিশি পোশাক ছাড়াও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আনসার র‍্যাবসহ অন্যান্য বাহিনী প্রতি বছরের মতো এবারও নিয়োজিত থাকবে।

এমটি/ এএটি

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email