মিজানুর রহমান, জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের সহায়তায় কাজ করছে সামাজিক সংগঠন ‘তরী’। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের সামনে বুথ স্থাপনের মাধ্যমে দিনব্যাপী চলছে সংগঠনটির বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম।

সরজমিনে দেখা যায়, সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবীরা খাতায় শিক্ষার্থীদের নাম, সামগ্রীর বিবরণ, স্বাক্ষর লিপিবদ্ধ করে টোকেনের মাধ্যমে ব্যাগ, বই, খাতা, মোবাইল ফোন ইত্যাদি মূল্যবান সামগ্রী বুথে বিনামূল্যে জমা রাখেন ও পরীক্ষা শেষে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের নিকট ফেরত দেন।

এর পাশাপাশি, প্রতিদিন সংগঠনটির ১৫ জনের অধিক সদস্য শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহায়তা করছেন । জানা যায়, প্রতিদিন তারা প্রায় ২৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী তাদের মূল্যবান সামগ্রী এখানে জমা রাখেন ।

পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি থেকে পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থী অঙ্কুর বলেন, ‘আমি কোনো অভিভাবক ছাড়াই এত দূরে এসেছি পরীক্ষা দিতে। এখানে কোনো আত্মীয় না থাকায় আমার ব্যাগ, ফোন কোথায় রাখবো এ নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম। তখন নতুন কলা ভবনের সামনে তরীর এই বুথ দেখে বিনামূল্যে আমার সামগ্রী জমা দিয়ে নিশ্চিন্তে পরীক্ষা দিতে পেরছি, আমি তাদেরকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই ‘।

তরী’র সভাপতি জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘সারাবছর আমরা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সাহায্য করি। এটার পাশাপাশি ভর্তি পরীক্ষার সময় তরী শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করার জন্য এমন বুথ স্থাপন করে আসছে’।

সাধারন সম্পাদক মো: রিছান উদ্দিন বলেন, অনেক দূর- দূরান্ত থেকে আশা পরীক্ষার্থীরা এ নিয়ে চিন্তায় থাকে পরীক্ষার সময় তারা তাদের মোবাইল, মানিব্যাগ এগুলো কোথায় রাখবে আমার তাদের জিনিসপত্রগুলো বিনামূল্যে জমা রেখে সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি, এবং অনেকে শিক্ষার্থী পরীক্ষায় কেন্দ্র চিনতে পারে না আমরা তাদের দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকি।

তরী’র সার্বিক কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনটির শিক্ষক উপদেষ্টা ও আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষক জনাব আ জ ম উমর ফারুক সিদ্দিকী জানান, পর্যাপ্ত সুযোগ ও সামর্থ্যের অভাবে আমাদের আশেপাশের অনেক শিশুই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছেনা। সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুদের অনেকেই সময়ের দুষ্টচক্রে প্রতিনিয়ত নিমজ্জিত হচ্ছে মাদকসেবন, সন্ত্রাসসহ নানান অন্ধকারে। এমনকি বঞ্চিত হচ্ছে মৌলিক অধিকার শিক্ষা থেকেও। এইসব শিক্ষার্থীদের শিক্ষার আলোয় নিয়ে আশার পাশাপাশি তারা নানা ধরনের সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে যা খুবই প্রশংসনীয়, তাদের এ কাজকে আমি সাধুবাদ জানাই। তাদের চলমান বিভিন্ন সেবা ও সহযোগিতার এ অগ্রযাত্রা সামনের দিনগুলোতে ও চলমান থাকবে এই প্রত্যাশা করছি।

উল্লেখ্য ‘ আলোর পথে আমরা ’ এই স্লোগানকে ধারন করে ২০০৮ সালের ২৮ এপ্রিল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে ‘ তরী’ তার যাত্রা শুরু করে।

প্রতিষ্টার পর থেকে সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের নিয়ে পনেরো বছর ধরে কাজ করে আসছে সংগঠনটি। বর্তমানে প্রায় তিন শতাধিক পথশিশুদের শিক্ষার আলোতে নিয়ে আসার জন্য তরী একটি ভ্রাম্যমাণ স্কুল পরিচালনা করছে। শিশুদের নিয়ে প্রতিবছর খেলাধুলা, চিত্রাঙ্কন, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা করা হয়। ইতোমধ্যে বেশকিছু শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য নানান বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আছে। এছাড়াও প্রতিবছর তরী থেকে বিনামূল্যে সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে শীত বস্ত্র ও শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

এমটি/ এএটি

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email