বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের হিসেবমতে বাংলাদেশে চেম্বারের সংখ্যা ৮৭ এবং সেক্টরভিত্তিক মোট বাণিজ্য সংগঠন ৪০৭ টি। বিধিমোতাবেক সকল সংগঠন দুই বছর মেয়াদে ( কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া) তাদের নির্বাচন পরিচালন করে আসছে। সারাদেশের বাণিজ্য সংগঠনগুলোর মধ্যে এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএ এর নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ন ও আলোচিত। এফবিসিসিআই এর সাথে সারাদেশের ব্যবসায়ী সংগঠন ও ব্যবসায়ীরা সম্পৃক্ত, যাকে ব্যবসায়ীদের প্যারেন্ট বা মূল অভিভাবক বলা হয়ে থাকে। অন্যদিকে দেশের তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানী মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ দেশের রপ্তানী বাণিজ্যের সিংহ ভাগ সম্পন্ন করে থাকে যার মাধ্যমে বৈদেশিক রপ্তানী আয়ের প্রায় ৮০ ভাগ আসে এই খাত থেকে। বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা এই দুই সংগঠনের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত আছেন। ফলে দেশের সকল ব্যবসায়ী জনগোষ্ঠী, পেশাজীবি ও সাধারন মানুষের কাছে এর গুরুত্ব ও আগ্রহ অত্যধিক। বিশেষ করে তরুণ ও আগামী প্রজন্ম যারা নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে প্রস্তুত করতে আগ্রহী তাদের কাছে ও এর প্রভাব লক্ষ্যনীয়।

বাংলাদেশে বাণিজ্য সংগঠন পরিচালনায় The Trade Organisations Ordinance, ১৯৬১ ০২ ডিসেম্বর ১৯৬১ সালে ইংরেজিতে প্রণীত হয়। সামরিক শাসনামলে উক্ত অধ্যাদেশের কতিপয় ধারা ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪ তারিখের গেজেটে The Trade Organisations (Amendment) Ordinance, ১৯৮৪-এর মাধ্যমে সংশোধন করা হয়। সময়ের চাহিদা পূরণ কল্পে The Trade Organisations Ordinance, ১৯৬১-কে রহিত করে যুগোপযোগীভাবে বাংলায় ১৩ এপ্রিল ২০২২ তারিখে নতুন বাণিজ্য সংগঠন আইন, ২০২২ প্রণয়ন করা হয়। আইনটি আরো যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে বাস্তব প্রেক্ষা পটের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রণয়নের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক আইনটির কতিপয় ধারা সংযোজন করে তা বাণিজ্য আইন ২০২৩ চূড়ান্ত করা হয়।

মূলত, দেশের ব্যবসা, শিল্প, বাণিজ্য ও সেবা খাতসহ সার্বিক অর্থনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে বাণিজ্য সংগঠন সমূহের ভূমিকা, কার্যক্রম, শৃঙ্খলা ও দায়বদ্ধতা সুসংহতকরণ এবং যথাযথ মনিটরিং করার লক্ষ্যেই সরকার বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের অধীনে বাণিজ্য সংগঠনগুলো একত্রীভূত করেছেন। ফলে বিভিন্ন দূর্যোগ ও জরুরী প্রয়োজনে বাণিজ্য সংগঠনগুলো দেশের স্বার্থ রক্ষায় সরকারের সাথে সমন্বয় করে কাজ করতে পারে।

আধুনিক বাণিজ্য ধারনা এবং ব্যাপ্তি শুধু আভ্যন্তরীণ পর্যায়েই সীমাবদ্ধ নেই। অনলাইন, আউটসোর্সিং,আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স (এ আই), চ্যাটজিপিটিসহ নানা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবাসায়িক দুনিয়াকে এখন ব্যবসায়িক ভিলেজে পরিণত করেছে। এমন বাস্তবতায় বাণিজ্য কৌশল ও পন্যের উদ্ভাবন, ধারনা ও চাহিদা বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে ক্রয়-বিক্রয় ও সরবরাহ করা সম্ভব। এ সকল আইডিয়া বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা এবং দেশি-বিদেশী সকল সুযোগ কাজে লাগাতে এবং নীতি নির্ধারক পর্যায়ে তথ্য অবহিত করন ও কৌশল বাস্তবায়নে বাণিজ্য সংগঠন-ই পারে যথাযথ ভূমিকা রাখতে। ফলে,বাণিজ্য সংগঠনগুলো তাদের স্বস্বসেক্টরের ব্যবসার উন্নতি, মালিক-শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষা, বৈদেশিক বাণিজ্যে বাজার সম্প্রসারন, পন্যের মান ও মূল্যরক্ষা,রিসার্স ও ডেভেলোপমেন্টে নতুন পন্য উদ্ভাবন এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারসহ বৈশ্বিক যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তাকে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করতে হয়। ফলে বাণিজ্য সংগঠনে এমন পেশাগত দক্ষ, মেধাবী, চৌকষ ও যোগ্যতা সম্পন্ন পরিচালক ও পরিচালনা পর্ষদ আবশ্যক। যার মাধ্যমে নির্দিস্ট সেক্টর এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট কোসেক্টর গুলো তাদের ব্যবসায়িক নিরাপত্তা সাধনে দেশের অর্থনীতি বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।

কিন্তু বাস্তবতা হলো বর্তমানে বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনের নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে নানা অনিয়ম ও বিতর্ক জন্ম দিয়েছে। স্বচ্ছ ভোটার তালিকা এবং ভুয়া ভোটার নিয়ে সম্প্রতি বিজিএমইএ নির্বাচনে প্রশ্ন উঠেছে, যা মহামান্য হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। এ সকল নির্বাচনে নানা প্রভাব বিস্তার এবং প্রক্রিয়া নিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও সুশীল মহলে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। তাছাড়া এ সকল ট্রেড বডির নির্বাচনে প্রচার প্রচারনায় যে পরিমান সময় ও অর্থের অপচয় করা হয়, ভবিষ্যৎ এ ধারা অব্যাহত থাকলে পেশাদার, সফল ও দক্ষ ব্যবসায়ী এ সকল নির্বাচনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। যা বাণিজ্য সংগঠনের উদ্দেশ্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করবে, তা দেশের অর্থনীতির জন্য মোটে ও কল্যাণ কর নয়।
তাই, বাণিজ্য সংগঠনের নির্বাচনের বাধ্য বাধকতার পাশাপাশি এ সকল নির্বাচন স্বচ্ছ জবাবদিহিতার মাধ্যমে কার্যকর বাণিজ্য সংগঠন গড়ে তোলা। দেশের ব্যবসা ও শিল্পখাত বিকাশে এবং আগামী প্রজন্মকে উদ্যমী ও উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার, বাণিজ্য মন্ত্রনালয়, ব্যবসায়ী বোদ্ধা ও পরামর্শকদের সম্পৃক্ত করে এমন একটি কাঠামো তৈরি করা দরকার,যাতে দেশের বাণিজ্য সংগঠন আভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাসটেইনেব্যাল ও স্মার্ট বাণিজ্য পরিবেশ গঠন ও সুরক্ষায় অগ্রনী ভূমিকা রাখতে পারে।

মোঃ মাসুদ কবির
ম্যানেজিং ডিরেক্টর
মোটেক্স ফ্যাশন

masud.motex@gmail.com

 

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email