শ্যামসুন্দর সিকদার: গত ২৩ মার্চ ‘দৈনিক একটি পত্রিকায় আমার লেখা ‘ভূমি ব্যবস্থাপনায় হয়রানি এবং কিছু সুপারিশ’ প্রকাশিত হয়েছিল। আবার কিছুদিন আগে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া যৎসামান্য জমির খাজনা দিতে গিয়ে অবগত হলাম জনসাধারণের আরও কিছু ভোগান্তির বিষয়।
বলাবাহুল্য, ১৯৮২ সালে উপজেলা ভূমি অফিসের দায়িত্ব ছিল উপজেলা রাজস্ব কর্মকর্তার (ইউআরও) কাছে। পরে এ দায়িত্ব এসি(ল্যান্ড)দের ওপর ন্যস্ত করা হয় ১৯৮৮ সালের মধ্যভাগে। আর আমার ব্যাচ (বিসিএস ’৮৪) দিয়েই ভূমি প্রশাসনে এ সংস্কারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। আমি খুবই মন খারাপ করেছিলাম ম্যাজিস্ট্রেসি বাদ দিয়ে আগের ইউআরও অফিসে আমাকে পদায়ন করায়। কিন্তু সরকারি আদেশ মানতে বাধ্য হয়েছিলাম। তবে যোগদান করেই আমি আবেদন করেছিলাম ভূমি প্রশাসন থেকে প্রত্যাহার করার জন্য। নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও এসিল্যান্ড, আরডিসি এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পদে ৯ বছর ভূমি প্রশাসনে কাজ করতে হয়েছিল।
এই দীর্ঘ অভিজ্ঞতা দিয়ে পরে বিসিএস (প্রশাসন) একাডেমি এবং এলএটিসিতে কয়েক বছর প্রশিক্ষণ অধিবেশন পরিচালনা করেছি। তবে আমাদের সময়ের এবং এখনকার প্রজন্মের কর্মকর্তাদের মন-মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গিতেও অনেক পরিবর্তন লক্ষ করেছি। সে প্রসঙ্গ না হয় আজ থাক। এখনকার অভিজ্ঞতাটা সোজা কথায় বলি, খারাপ লেগেছে কিছু বিষয়। কিছু বিষয় আছে, যা প্রায়োগিক ত্রুটির কারণেই জনস্বার্থের পরিপন্থি হয়ে দাঁড়িয়েছে—
প্রথমত, জমির খাজনা অনলাইনে পরিশোধ করার জন্য আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। খুব ভালো কথা। কিন্তু এই সেবা যারা দিচ্ছেন এবং যারা নিচ্ছেন তারা কতটুকু প্রস্তুত? দ্বিতীয়ত, এতে কিছু নিয়মকানুন কতটা গণমুখী করে প্রয়োগ হয়? তৃতীয়ত, যৌথ খতিয়ানে জমির মালিকদের ক্ষেত্রে ভূমি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে নতুন কিছু ভোগান্তির বিষয় অবহিত হয়েছি।
এখন জমির খাজনা দিতে হয় অনলাইনে। এজন্য যিনি খাজনা দেবেন তার নামে এনআইডি দিয়ে একটা অ্যাকাউন্ট চালু করতে হয় অনলাইনে। এতে অবশ্য প্রথমবার কোনো একটি সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসের কাছ থেকে অনুমোদন লাগবে অনলাইনেই। এটা ঠিক আছে। বলা হচ্ছে যে, যেই নামের এনআইডি দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে, সেই নামে বাংলাদেশের যত জায়গায় যত জমি আছে, তার সবটাই এ অ্যাকাউন্টে ভেসে উঠবে। ফলে একজন ভূমিমালিক তার সব জমির খাজনা একত্রে পরিশোধ করতে পারবেন। এ উদ্যোগটা নিঃসন্দেহে চমৎকার। প্রকৃত বাস্তবতা হলো, এখনো একজন মালিকের সব জমি অনলাইনে একত্রে দেখতে পাওয়া যায় না। কারণ ভূমি মন্ত্রণালয় হতে এ ডাটাবেজ তৈরির কাজটি এখনো সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। এজন্য হয়তো আরও সময় লাগবে। তবে প্রত্যেক ভূমিমালিক নিজের সব জমির তথ্য দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলার সময় তা এন্ট্রি করে নিতে পারেন। তাই এ প্রক্রিয়ায় শুরুর দিকে একটু সমস্যা হলেও পরবর্তী সময়ে তা ঠিক হয়ে যাবে।
সুতরাং এই অনলাইনে খাজনা প্রদানের ব্যবস্থাটি একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ এবং এজন্য সরকার ও সংশ্লিষ্টদের অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হবে। এ ব্যবস্থার আরও একটা সুফল হলো, সব ভূমিমালিকের নামে থাকা জমিগুলোর একটা ‘কমপ্রিহেনসিভ ডাটাবেজ’ তৈরি হয়ে যাবে। তখন একটা ‘ইউনিক’ ভূমি প্রশাসনও কার্যকর করা যাবে।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যারা সেবা দিচ্ছেন, তারা এখনো এ প্রক্রিয়াতে পুরোপুরি দক্ষতা অর্জন করতে পারেনি। যারা বয়সে প্রবীণ ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, তাদের কেউ কেউ এখনো পর্যন্ত কম্পিউটার বা ল্যাপটপ চালাতেই জানেন না। তবে তরুণ বয়সের কর্মচারীরা ওই প্রবীণদের অজ্ঞতা সাধারণ জনগণকে বুঝতেই দেয় না। এজন্য এ চ্যালেঞ্জের দিকটা অপ্রকাশিত থেকে যায়।
আবার যারা সেবা নিচ্ছেন, তাদের অধিকাংশই ‘আইটিতে অশিক্ষিত’। তা ছাড়া জায়গা-জমির কাগজপত্র বোঝেন না, এমন অনেক শিক্ষিত মানুষও আছেন। কাজেই সেবাগ্রহণকারী অনেকেই বাধ্য হন অন্য কারও সাহায্য নিতে এবং এতে কিছুটা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির শিকারও হন (ক্ষেত্রবিশেষে তৃতীয় একটা পেশাজীবী শ্রেণি তৈরি হচ্ছে এদের সাহায্য করতে)। যাহোক, এ পরিবেশের সঙ্গেও মানুষ হয়তো একসময় নিজেকে প্রস্তুত করে নেবে।
এবার বলি দ্বিতীয় বিষয়ে ভিন্ন কিছু অভিজ্ঞতার কথা। বিদ্যমান নিয়মকানুন কিছু অসুবিধা সৃষ্টি করছে, তা বলি—
(১) আগে যৌথ খতিয়ানের কোনো মালিক তার নিজের অংশের জমির খাজনা আংশিক হিসেবে দিতে পারতেন। কিন্তু এখন অনলাইনে আংশিক খাজনা দেওয়ার সুযোগ নেই বলা হচ্ছে। মালিকদের যে কোনো একজনের একটি এনআইডি দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে পুরো খতিয়ানের খাজনা দিতে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মচারীরা উৎসাহ দিচ্ছে। যিনি আংশিক খাজনা দিতে চান, তাকে তার অংশের জমি খারিজ খতিয়ান করে তারপর আলাদা করে খাজনা দিতে পারবেন মর্মে বলা হচ্ছে। তবে এই খারিজ খতিয়ান করা তো সময়সাপেক্ষ।
(২) অনলাইনে মিউটেশন পদ্ধতি চালুর পর অন্য আরেকটি সমস্যা পরিলক্ষিত হচ্ছে। আগে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে মিউটেশন করার সময় মালিকের নাম কিংবা জমির পরিমাণ লাল কালিতে কেটে নতুন নাম ও জমির পরিমাণ সংশোধন করে লিখে মিউটেশন চূড়ান্ত করা হতো। এতে কোনো সমস্যা হতো না। আর এখন যৌথ খতিয়ানের কোনো মালিকের পুরো অংশ নতুন কেউ কিনলে অনলাইনে মিউটেশন করার সময় তার নামে নতুন একটা খতিয়ান চালু করে দেওয়া হয় বটে। কিন্তু মূল যৌথ খতিয়ানে ওই বিক্রেতার নাম ও জমির পরিমাণ বাদ দেওয়ার কোনো প্রতিফলন দেখা যায় না। এ কারণে খাজনা দিতে গেলে তখন আবার হিসাব-নিকাশে সমস্যাও দেখা দেয় কিংবা পূর্ব খতিয়ানে নাম বাদ না দেওয়ায় পূর্ব মালিকও খাজনা দিয়ে দিতে পারে (আমি নিজে ভুক্তভোগী)। ফলে ল্যান্ড-লিটিগেশন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
(৩) গত বছর জমির সাব-কবলা দলিল করার সময় খাজনা সম্পূর্ণ পরিশোধ করেই দলিল রেজিস্ট্রি করতে হয়েছিল। তারপর যথারীতি নামজারি করা হয়েছে। এখন আমার পুরো খাজনার টাকা পরিশোধ করার পর যখন প্রিন্ট কপি পাই, তখন দেখা গেল ওই জমির তিন বছরের বকেয়াসহ খাজনার টাকা নেওয়া হয়েছে। একটু অবাক হলাম। তারপর বুঝলাম যে, গত বছর দলিল রেজিস্ট্রি করার সময় যেই খাজনা পরিশোধ করা হয়েছিল, তা অনলাইন অ্যাকাউন্টে এখনো এন্ট্রি হয়নি। কাজেই ওই মুহূর্তে আর এ বিষয়ে কিছু করার ছিল না।
(৪) খাজনা পরিশোধের প্রিন্ট কপি পাওয়ার পর দেখতে পেলাম, যেই মালিক তার সম্পূর্ণ অংশ জমি বিক্রি করে নিঃস্বত্ববান হয়ে গেছে, তার নামও পূর্বের যৌথ খতিয়ানে রয়ে গেছে। আবার জমির প্লটগুলোর শ্রেণি ভুল লেখা হয়েছে। যেমন নাল স্থলে ডোবা কিংবা বাড়ি স্থলে ডোবা বা ডোবা স্থলে নাল লেখা হয়েছে। এটা হয়তো নতুন নামজারির সময় ভুলে লেখা হয়েছে। সেজন্যই বলেছি যে, সেবাপ্রদানকারীরা কতটুকু প্রস্তুত?
(৫) আরেকটি বিষয় হলো, যারা প্রবাসী শ্রমিক এবং প্রচুর অর্থ রেমিট্যান্স হিসেবে দেশে পাঠায়, তারা বিদেশ থেকে কীভাবে নিজের জমির খাজনা দেবে, সেই বিষয়টি বিবেচনায় রেখে অনলাইনে খাজনা পরিশোধের পদ্ধতি ডিজাইন করা হয়েছে কি না? তা জানি না। (আগামীকাল শেষ পর্ব)
লেখক: প্রাক্তন সিনিয়র সচিব, কবি ও গবেষক
ভূমি ব্যবস্থাপনায় ভোগান্তি দূর করুন
শ্যামসুন্দর সিকদার: গত ২৩ মার্চ ‘দৈনিক একটি পত্রিকায় আমার লেখা ‘ভূমি ব্যবস্থাপনায় হয়রানি এবং কিছু সুপারিশ’ প্রকাশিত হয়েছিল। আবার কিছুদিন আগে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া যৎসামান্য জমির খাজনা দিতে গিয়ে অবগত হলাম জনসাধারণের আরও কিছু ভোগান্তির বিষয়।
বলাবাহুল্য, ১৯৮২ সালে উপজেলা ভূমি অফিসের দায়িত্ব ছিল উপজেলা রাজস্ব কর্মকর্তার (ইউআরও) কাছে। পরে এ দায়িত্ব এসি(ল্যান্ড)দের ওপর ন্যস্ত করা হয় ১৯৮৮ সালের মধ্যভাগে। আর আমার ব্যাচ (বিসিএস ’৮৪) দিয়েই ভূমি প্রশাসনে এ সংস্কারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। আমি খুবই মন খারাপ করেছিলাম ম্যাজিস্ট্রেসি বাদ দিয়ে আগের ইউআরও অফিসে আমাকে পদায়ন করায়। কিন্তু সরকারি আদেশ মানতে বাধ্য হয়েছিলাম। তবে যোগদান করেই আমি আবেদন করেছিলাম ভূমি প্রশাসন থেকে প্রত্যাহার করার জন্য। নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও এসিল্যান্ড, আরডিসি এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পদে ৯ বছর ভূমি প্রশাসনে কাজ করতে হয়েছিল।
এই দীর্ঘ অভিজ্ঞতা দিয়ে পরে বিসিএস (প্রশাসন) একাডেমি এবং এলএটিসিতে কয়েক বছর প্রশিক্ষণ অধিবেশন পরিচালনা করেছি। তবে আমাদের সময়ের এবং এখনকার প্রজন্মের কর্মকর্তাদের মন-মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গিতেও অনেক পরিবর্তন লক্ষ করেছি। সে প্রসঙ্গ না হয় আজ থাক। এখনকার অভিজ্ঞতাটা সোজা কথায় বলি, খারাপ লেগেছে কিছু বিষয়। কিছু বিষয় আছে, যা প্রায়োগিক ত্রুটির কারণেই জনস্বার্থের পরিপন্থি হয়ে দাঁড়িয়েছে—
প্রথমত, জমির খাজনা অনলাইনে পরিশোধ করার জন্য আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। খুব ভালো কথা। কিন্তু এই সেবা যারা দিচ্ছেন এবং যারা নিচ্ছেন তারা কতটুকু প্রস্তুত? দ্বিতীয়ত, এতে কিছু নিয়মকানুন কতটা গণমুখী করে প্রয়োগ হয়? তৃতীয়ত, যৌথ খতিয়ানে জমির মালিকদের ক্ষেত্রে ভূমি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে নতুন কিছু ভোগান্তির বিষয় অবহিত হয়েছি।
এখন জমির খাজনা দিতে হয় অনলাইনে। এজন্য যিনি খাজনা দেবেন তার নামে এনআইডি দিয়ে একটা অ্যাকাউন্ট চালু করতে হয় অনলাইনে। এতে অবশ্য প্রথমবার কোনো একটি সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসের কাছ থেকে অনুমোদন লাগবে অনলাইনেই। এটা ঠিক আছে। বলা হচ্ছে যে, যেই নামের এনআইডি দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে, সেই নামে বাংলাদেশের যত জায়গায় যত জমি আছে, তার সবটাই এ অ্যাকাউন্টে ভেসে উঠবে। ফলে একজন ভূমিমালিক তার সব জমির খাজনা একত্রে পরিশোধ করতে পারবেন। এ উদ্যোগটা নিঃসন্দেহে চমৎকার। প্রকৃত বাস্তবতা হলো, এখনো একজন মালিকের সব জমি অনলাইনে একত্রে দেখতে পাওয়া যায় না। কারণ ভূমি মন্ত্রণালয় হতে এ ডাটাবেজ তৈরির কাজটি এখনো সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। এজন্য হয়তো আরও সময় লাগবে। তবে প্রত্যেক ভূমিমালিক নিজের সব জমির তথ্য দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলার সময় তা এন্ট্রি করে নিতে পারেন। তাই এ প্রক্রিয়ায় শুরুর দিকে একটু সমস্যা হলেও পরবর্তী সময়ে তা ঠিক হয়ে যাবে।
সুতরাং এই অনলাইনে খাজনা প্রদানের ব্যবস্থাটি একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ এবং এজন্য সরকার ও সংশ্লিষ্টদের অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হবে। এ ব্যবস্থার আরও একটা সুফল হলো, সব ভূমিমালিকের নামে থাকা জমিগুলোর একটা ‘কমপ্রিহেনসিভ ডাটাবেজ’ তৈরি হয়ে যাবে। তখন একটা ‘ইউনিক’ ভূমি প্রশাসনও কার্যকর করা যাবে।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যারা সেবা দিচ্ছেন, তারা এখনো এ প্রক্রিয়াতে পুরোপুরি দক্ষতা অর্জন করতে পারেনি। যারা বয়সে প্রবীণ ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, তাদের কেউ কেউ এখনো পর্যন্ত কম্পিউটার বা ল্যাপটপ চালাতেই জানেন না। তবে তরুণ বয়সের কর্মচারীরা ওই প্রবীণদের অজ্ঞতা সাধারণ জনগণকে বুঝতেই দেয় না। এজন্য এ চ্যালেঞ্জের দিকটা অপ্রকাশিত থেকে যায়।
আবার যারা সেবা নিচ্ছেন, তাদের অধিকাংশই ‘আইটিতে অশিক্ষিত’। তা ছাড়া জায়গা-জমির কাগজপত্র বোঝেন না, এমন অনেক শিক্ষিত মানুষও আছেন। কাজেই সেবাগ্রহণকারী অনেকেই বাধ্য হন অন্য কারও সাহায্য নিতে এবং এতে কিছুটা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির শিকারও হন (ক্ষেত্রবিশেষে তৃতীয় একটা পেশাজীবী শ্রেণি তৈরি হচ্ছে এদের সাহায্য করতে)। যাহোক, এ পরিবেশের সঙ্গেও মানুষ হয়তো একসময় নিজেকে প্রস্তুত করে নেবে।
এবার বলি দ্বিতীয় বিষয়ে ভিন্ন কিছু অভিজ্ঞতার কথা। বিদ্যমান নিয়মকানুন কিছু অসুবিধা সৃষ্টি করছে, তা বলি—
(১) আগে যৌথ খতিয়ানের কোনো মালিক তার নিজের অংশের জমির খাজনা আংশিক হিসেবে দিতে পারতেন। কিন্তু এখন অনলাইনে আংশিক খাজনা দেওয়ার সুযোগ নেই বলা হচ্ছে। মালিকদের যে কোনো একজনের একটি এনআইডি দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে পুরো খতিয়ানের খাজনা দিতে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মচারীরা উৎসাহ দিচ্ছে। যিনি আংশিক খাজনা দিতে চান, তাকে তার অংশের জমি খারিজ খতিয়ান করে তারপর আলাদা করে খাজনা দিতে পারবেন মর্মে বলা হচ্ছে। তবে এই খারিজ খতিয়ান করা তো সময়সাপেক্ষ।
(২) অনলাইনে মিউটেশন পদ্ধতি চালুর পর অন্য আরেকটি সমস্যা পরিলক্ষিত হচ্ছে। আগে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে মিউটেশন করার সময় মালিকের নাম কিংবা জমির পরিমাণ লাল কালিতে কেটে নতুন নাম ও জমির পরিমাণ সংশোধন করে লিখে মিউটেশন চূড়ান্ত করা হতো। এতে কোনো সমস্যা হতো না। আর এখন যৌথ খতিয়ানের কোনো মালিকের পুরো অংশ নতুন কেউ কিনলে অনলাইনে মিউটেশন করার সময় তার নামে নতুন একটা খতিয়ান চালু করে দেওয়া হয় বটে। কিন্তু মূল যৌথ খতিয়ানে ওই বিক্রেতার নাম ও জমির পরিমাণ বাদ দেওয়ার কোনো প্রতিফলন দেখা যায় না। এ কারণে খাজনা দিতে গেলে তখন আবার হিসাব-নিকাশে সমস্যাও দেখা দেয় কিংবা পূর্ব খতিয়ানে নাম বাদ না দেওয়ায় পূর্ব মালিকও খাজনা দিয়ে দিতে পারে (আমি নিজে ভুক্তভোগী)। ফলে ল্যান্ড-লিটিগেশন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
(৩) গত বছর জমির সাব-কবলা দলিল করার সময় খাজনা সম্পূর্ণ পরিশোধ করেই দলিল রেজিস্ট্রি করতে হয়েছিল। তারপর যথারীতি নামজারি করা হয়েছে। এখন আমার পুরো খাজনার টাকা পরিশোধ করার পর যখন প্রিন্ট কপি পাই, তখন দেখা গেল ওই জমির তিন বছরের বকেয়াসহ খাজনার টাকা নেওয়া হয়েছে। একটু অবাক হলাম। তারপর বুঝলাম যে, গত বছর দলিল রেজিস্ট্রি করার সময় যেই খাজনা পরিশোধ করা হয়েছিল, তা অনলাইন অ্যাকাউন্টে এখনো এন্ট্রি হয়নি। কাজেই ওই মুহূর্তে আর এ বিষয়ে কিছু করার ছিল না।
(৪) খাজনা পরিশোধের প্রিন্ট কপি পাওয়ার পর দেখতে পেলাম, যেই মালিক তার সম্পূর্ণ অংশ জমি বিক্রি করে নিঃস্বত্ববান হয়ে গেছে, তার নামও পূর্বের যৌথ খতিয়ানে রয়ে গেছে। আবার জমির প্লটগুলোর শ্রেণি ভুল লেখা হয়েছে। যেমন নাল স্থলে ডোবা কিংবা বাড়ি স্থলে ডোবা বা ডোবা স্থলে নাল লেখা হয়েছে। এটা হয়তো নতুন নামজারির সময় ভুলে লেখা হয়েছে। সেজন্যই বলেছি যে, সেবাপ্রদানকারীরা কতটুকু প্রস্তুত?
(৫) আরেকটি বিষয় হলো, যারা প্রবাসী শ্রমিক এবং প্রচুর অর্থ রেমিট্যান্স হিসেবে দেশে পাঠায়, তারা বিদেশ থেকে কীভাবে নিজের জমির খাজনা দেবে, সেই বিষয়টি বিবেচনায় রেখে অনলাইনে খাজনা পরিশোধের পদ্ধতি ডিজাইন করা হয়েছে কি না? তা জানি না। (আগামীকাল শেষ পর্ব)
লেখক: প্রাক্তন সিনিয়র সচিব, কবি ও গবেষক
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি
শাহজালাল বিমানবন্দরে ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ গ্রেফতার
মামলা না নিলে ওসিকে এক মিনিটে সাসপেন্ড করে দেবো: ডিএমপি কমিশনার
আইপিএল: এ পর্যন্ত কোন তারকাকে ভেড়ালো কোন দল
ব্যাটারিচালিত রিকশা চলবে, হাইকোর্টের আদেশে স্থিতাবস্থা
মেগা মানডে ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীদের তাণ্ডব
নতুন ইসির ব্রিফিংয়ের আগে নামানো হলো শেখ মুজিবের ছবি
আইপিএলে সর্বোচ্চ দামে ইতিহাস গড়লেন পান্ত
ডেঙ্গুতে একদিনে বছরের সর্বোচ্চ মৃত্যু
সোহরাওয়ার্দী কলেজে ভাঙচুর, পরীক্ষা স্থগিত
পাঁচ বিসিএসে নিয়োগ পাবে ১৮ হাজার ১৪৯ জন
১১ দফা দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষদে তালা
দীর্ঘ ২৯ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টানলেন এ আর রহমান
এক সপ্তাহে রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার
ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার পক্ষে আইনি লড়াই করতে চান জেড আই খান পান্না