স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী বলেছেন, “সরকারি অফিস মানেই দুর্নীতির আখড়া, সরকারি কর্মচারী মানেই দুর্নীতিগ্রস্থ – এমন এক ধারণা জনমনে বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছে। এ কারণে ক্যাডার সার্ভিসের প্রতি জনগণের সম্মানবোধ কমে যাচ্ছে। অনেক নবীন কর্মকর্তাও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে। নিজের পদ ও চেয়ার টিকিয়ে রাখা এবং ভবিষ্যতে পদোন্নতির পথ নির্বিঘ্ন রাখতে দুর্নীতি মেনে নেয়া হচ্ছে এবং এভাবেই প্রশাসনযন্ত্র তাঁর শক্তিমত্তা হারিয়েছে।
বুধবার (২৮ আগস্ট) সাভারস্থ বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিভিন্ন ক্যাডারের তরুণ বিসিএস কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মুনীর চৌধুরী বলেন, বিসিএস ক্যাডার অফিসার হয়ে কি মূল্য, যদি কোনো কর্মকর্তা তার অফিস বা কার্যক্ষেত্রকে দুর্নীতির বলয় থেকে মুক্ত করতে না পারেন। সরকারি অফিসে আপ্যায়নের জন্য কেন ঠিকাদার থেকে, ইটভাটা থেকে, লাইসেন্স থেকে, সরকারী সম্পদ ইজারা থেকে চাঁদা নিয়ে খরচ বহন করতে হয়? কেন অতিথিদের আপ্যায়নের ব্যয়ভার জেলা প্রশাসনকে বহন করতে হয়? প্রত্যেক সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারী সরকারি ভ্রমণে টিএ ও ডিএ প্রাপ্য হন, তা দিয়েই আপ্যায়নের ব্যয়ভার বহন করতে হবে, জেলা প্রশাসকের তহবিল থেকে নয়।
তিনি বলেন, দশকের পর দশক এসব অন্যায় ও দুর্নীতির সংস্কৃতি ডালপালা বিস্তৃত হয়ে এখন মহীরূহে পরিণত হয়েছে। শুধু ঘুষ না খাওয়াই সততা নয়, কারো প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা, কারো স্বার্থ রক্ষার্থে সিদ্ধান্ত নেয়া, বিশেষ স্বার্থে কাজ করা ও অন্যায় আদেশ প্রতিপালন করাও দুর্নীতির পর্যায়ে পড়ে। নিজ ক্যাডারের প্রতি আনুকূল্য দেখিয়ে দুর্নীতির দায়মুক্ত করে দেয়াও গর্হিত অপরাধ। কোনো ক্যাডারের উপর অন্য ক্যাডারের কর্তৃত্ব নেই, সংবিধান তা সমর্থন করে না।
জাদুঘরের মহাপরিচালক বলেন, জুনিয়র অফিসারদের সামনে সৎ নেতৃত্ব ও সৎ ব্যক্তিত্বের উদাহরণ খুব নগণ্য, ফলে সততার অনুশাসন মুছে যাচ্ছে, এ পরিস্থিতি ভয়ংকর। বিসিএস কর্মকর্তাদের চেয়ারে বসে না থেকে ঘন ঘন মাঠে এবং অধীনস্থ অফিসসমূহ পরিদর্শন করে দুর্নীতির শেকড় উৎপাটন করতে হবে। সৎ হলেও অফিস প্রধানের দুর্বলতা, অলসতা ও দৃঢ় ভূমিকার অভাবে অনেক অফিসের অধীনস্থ কর্মচারীরা দুর্নীতিতে ডুবে যাচ্ছে। ছোট কর্মচারিরা ঘুষ নিচ্ছে অথচ অফিস প্রধান তা জানেন না, এমন সৎ অথচ মেরুদণ্ডহীন মানুষের কোনো প্রয়োজন নেই।
তিনি আরও বলেন, সিনিয়র কর্মকর্তা অন্যায় আদেশ দিলেও জুনিয়র কর্মকর্তা তা আইনতঃ মানতে বাধ্য নন । ছোট দুর্নীতি থেকে বড় দুর্নীতি এবং দুর্বৃত্তায়ন সৃষ্টি হয়, সীমালঙ্ঘন করলে মহান আল্লাহ তায়ালা শাস্তি দেন। যেকোনো অন্যায়, অপরাধ ও সীমালঙ্ঘনের পরিণতি সম্পর্কে সাম্প্রতিক ঘটনা থেকে সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের শিক্ষা নিতে হবে। অসৎভাবে উপার্জিত অর্থের পরিণতি কোনোভাবেই শুভ নয়। তরুণ কর্মকর্তাদের সততার শক্তি দিয়ে বর্তমান ভঙ্গুর হওয়া প্রশাসনকে দৃঢ় অবস্থানে আনতে হবে।” এ অধিবেশনে ৩৫০ জন কর্মকর্তা অংশ নেনে।
এমটি/ এএটি