জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলের গণরুমে মধ্যরাত থেকে রাতভর র্যাগিং এর ঘটনা ঘটেছে।
গত বুধবার (৬ ডিসেম্বর) হলের গণরুমে রাত একটায় ৫০ ব্যাচের (২০২০-২১ সেশন) দ্বিতীয় বর্ষের কতিপয় শিক্ষার্থীর হাতে ৫১ ব্যাচের (২০২১-২২ সেশন) প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীরা এই লাঞ্চনার শিকার হন।
এ ঘটনায় ৫০ ব্যাচের দর্শন বিভাগের ফয়সাল মারুফ ও প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের শুভাশিষ জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এর আগে গত আগস্টে মারুফের বিরুদ্ধে দুই শিক্ষার্থীকে গণরুম থেকে তুলে নিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মীর মশাররফ হোসেন হলের গণরুমে অবস্থানকারী প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীরা জানান, ‘মধ্যরাতে হলের ৫০ ব্যাচ (২০২০-২১ সেশন) ৮/৯ জন সিনিয়র হঠাৎ করে আমাদের গণরুমে এসে ফরমাল হয়ে লাইনে দাঁড়াতে বলে। এসময় রসায়ন ৫১ ব্যাচের আকাশকে চড় মারেন দর্শন ৫০ ব্যাচের মারুফ ভাই। এরপর ভুগোল ও পরিবেশ বিভাগের নাইমকে মারুফ ভাই চড় মারেন ও প্রাণরসায়ন বিভাগের শুভাশিষ ভাই বুকের মধ্যে সজোরে লাথি মারেন। নাইম তখনই অসুস্থ হয়ে পড়ে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা আরো জানায়, ‘কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়লেও তারা র্যাগিং থামায়নি। আমাদের সবাইকে লাইন করে দাঁড় করিয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের আশরাফুলকে ও প্রাণীবিজ্ঞানের রিফাতকে একাধিকবার চড় থাপ্পড় মারা হয়। তখন অসুস্থ দুইজনকে শুয়ে থাকা অবস্থায় সারা শরীরে পানি ঢেলে দেন মারুফ ভাই। এক ঘন্টার বেশি সময় আমাদেরকে মুরগি,চেয়ার, বানরের মতো বানিয়ে নানা কায়দায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের নাইমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে জানান ‘গতকাল আমাদের গণরুম হয়েছে। আমি ভাইদের কথার সঠিক জবাব দিতে না পারায় আমাকে বকাঝকা করেছে, গালি দিয়েছে। একথা বলেই ফোন কেটে দেন তিনি। পরক্ষণেই পুনরায় ফোন ব্যাক করে তিনি জানান, ‘আমি গতকাল রাতে হলে ছিলাম না।
এ ঘটনায় প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের রিফাত মুঠোফোনে গণরুমে র্যাগিং হয়েছে স্বীকার করে, পরক্ষণেই কল কেটে দেন।
এ ঘটনা পুরোপুরি অস্বীকার করে মারুফ বলেন, ‘আমাদের হলে গত ৫/৬ মাস কোন গণরুম হয় না৷ গতকালও হয়নি৷ আমি গতকাল হলে ছিলাম না। রাতে ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলাম। সকালে ক্যাম্পাসে এসেছি।
তবে গত বুধবার রাতভর গণরুমে চিৎকার চেঁচামেচি ও গালাগালি শুনতে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন গণরুম সংলগ্ন কক্ষের বাসিন্দারা৷ মারুফ গণরুমে উপস্থিত থেকে নির্যাতনে অংশ নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা৷
এ ঘটনায় মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. সাব্বির আলম জানান, ‘এ ঘটনায় আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। তবে লিখিত না পেলেও আমি বিষয়টা খতিয়ে দেখবো৷ আমার কাছে ভূগোল বিভাগের ছেলেরা আজ এসে বলেছিল তাদের হল এলোটমেন্ট চেঞ্জ করে দেয়ার জন্য। এথেকে আন্দাজ করেছি, হয়তো রাতে তাদের সাথে কিছু হয়েছে। আমি বিষয়টি পুরোপুরি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিবো।
উল্লেখ্য, জাবির হলগুলোতে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করেও গণরুম বন্ধ করা যায়নি। এসব গণরুমে প্রায়শই র্যাগিং এর মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা৷ এর আগে বহু অভিযোগ থাকলেও হলের র্যাগিং বন্ধ করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নানা সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝোঁপঝাড় ও নিরিবিলি জায়গাতেও র্যাগিং এর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
টিআর/এমটি