রিয়াজুল ইসলাম কাওছার: মাদারীপুরে কয়েকটি ক্যাটেগরিতে জয়ীতা সম্মাননা পুরস্কার পেলো দক্ষ্য নারীরা। যাঁদের একজন প্রভাষক উম্মে সায়মা বেলী। শুধু ব্যক্তি বা পরিবার নয়, স্বামী সন্তান ও পরিবার জয় করে যিনি জয় করে নিয়েছেন সমাজ, তিনিই জয়িতা। একজন সংগ্রামী অপ্রতিরোধ্য নারীর প্রতীকী নাম জয়িতা’। নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের মূর্ত প্রতীক জয়িতা। এ বছর বেগম রোকেয় দিবসে মাদারীপুর জেলায় জয়িতা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন শিবচরের মেয়ে উম্মে সায়মা (বেলী)। একজন নারী হয়েও সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সরকারের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর তাকে এই স্বীকৃতি দেয়।
গত ৭ ফেব্রুয়ারী বুধবার দুপুরে মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খানের সভাপতিত্বে এক অনাঢ়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উম্মে সায়মা (বেলী) সহ মোট পাঁচজন জয়িতার হাতে প্রধান অতিথি হিসেবে সম্মাননা তুলে দেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাজাহান খান এমপি।
আমাদের সমাজে একটি কথা প্রচলিত আছে ‘যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। কিন্তু এই কথাটি এখন আর ধোপে টিকেনা, কারণ নারীরা এখন আর শুধু রান্না-বান্না আর সংসার ধর্ম পালনের মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেননি। আটপৌড়ে জীবনের গন্ডি ডিঙ্গিয়ে নিজেদের দক্ষতা, যোগ্যতা এবং অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে নারীরা পৌঁছে গেছেন সর্বোচ্চ শেখরে।
উম্মে সায়মা (বেলী) তেমনি একজন জয়িতার নাম। যিনি নিজের অদম্য ইচ্ছাকে সম্বল করে চরম প্রতিকূলতাকে জয়ের মাধ্যমে তৃণমূল থেকে গুটি গুটি পায়ে সমাজের প্রায় সকল ক্ষেত্রে নিজের জন্য অনন্য সব জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন। সমাজের প্রায় সকল ক্ষেত্রে তার অনবদ্য বিচরণ, আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার সরব উপস্থিতি কেড়ে নিয়েছে সহস্র মানুষের প্রাণ। তার লাখো ভক্ত তাই এই জয়িতার স্বীকৃতিতে কেবল আনন্দে উদ্বেলই নন, তাকে অভিনন্দনের বন্যায় ভাসিয়ে চলেছেন দেশ – বিদেশ থেকে প্রতিনিয়ত।দেশ বিদেশের অসংখ্য ফেসবুকের ওয়ালে ওয়ালে তাকে এবার অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।
২০২০ সালে মহামারী করোনায় মানুষ যখন নিজেদের অসহায় ভাবতে শুরু করেন, তখনই সেখানে ছুটে যান বেলী। অসহায় মানুষকে যতটুকু পারেন সহায়তা করেন, তাকে মানসিকভাবে উজ্জীবীত করে আবার দাঁড়াবার প্রেরণা যোগান। ঈদের সময় গরীব অসহায়দের মাঝে ঈদ সামগ্রী, শীতার্ত মানুষ প্রতি বছর যার হাত থেকে উষ্ণ বস্ত্রের যোগান পায়,অন্যদিকে প্রবাসীদের সুখে দুখেও,বিভিন্ন সমস্যায় পাশে থাকেন তিনি,এমন এক নারীর নাম বেলী।মানবাধিকার সংগঠন, তরুণদের সামাজিক সংগঠন, নারীদের ব্যবসায়িক এবং স্বাবলম্বী হওয়ার উদ্যোগ, কিংবা সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা সামগ্রী সঙ্কট দূর করতে তিনি যথা সাদ্য চেষ্টা চালিয়ে জান নিরলস ভাবে।
বেলী ১৯৭৮ সালে খুলনা শহরে জন্মগ্রহণ করেন।বাবার চাকুরী সুবাধে তাদের পরিবার তখন খুলনাতে থাকতেন।তার স্থায়ী ঠিকানা মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার গুয়াতলা গ্রাম।
শিবচরের শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম বসির উদ্দিন আহমেদ (বসির মাষ্টার) ও সাজেদা বেগমের তিন সন্তানের মধ্যে তিনি মেঝ।তার সহদর ছোট ভাই সাববির আহমেদ ইতালির মিলানোস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের শ্রম কনসাল হিসেবে কর্মরত আছেন।স্বামী ইতালি প্রবাসী সৈয়দ গোলাম ফারুক কাওছার।
তিনি ২০০৫ সালে ইডেন মহিলা কলেজের সমাজ কর্ম বিভাগ থেকে এমএসএস পাশ করেন।বর্তমানে তিনি শিবচরের রিজিয়া বেগম মহিলা কলেজ প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
এছাড়াও বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি মাদারীপুর জেলার শিবচর শাখার পরিচালক, শিবচর ডায়বেটিস সমিতির আজিবন সদস্য ও বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ শিবচর পৌর শাখার সিনিয়র সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি এক কন্যার জননী।প্রবাসী পরিবারের সদস্য বেলীর এই সাফল্যের খবরে প্রবাসী কমিউনিটির পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রবাসী অধিকার সংস্থার মুখপাত্র এবং মিলান বাংলা প্রেসক্লাব ইতালির সভাপতি সংবাদ শ্রমিক রিয়াজুল ইসলাম কাওছার।
এমটি/ এআর