স্টাফ রিপোর্টার: বিদায়ী ২০২৩ সালে দেশে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল মুদ্রাস্ফীতি। চলতি সময়ে এটি ৯ শতাংশের কাছাকাছি।এছাড়া সামষ্টিক অর্থনীতিতে টানাপড়েন চলেছে। ডলার সংকটে ছোট উদ্যোক্তাদের কাঁচামাল আমদানিসহ নানা ধরনের চাপের মধ্যে পড়তে হয়েছে। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশে গেলেও বাজার থেকে ডলার পেতে কষ্ট হয়েছে। অনেক সময় বেশি দাম দিয়েও পাওয়া যায়নি। এ রকম একটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নতুন বছরের আলো দেখেছে বাংলাদেশ। এ রকম পরিস্থিতিতে নতুন বছরে সংস্কার কার্যক্রমের তাগিদ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. আতিউর রহমান।

ড. আতিউর রহমান বলেন, নতুন বছরে নতুন সরকার এসেছে। মানুষের যে দুর্দশা আছে তা দূর করতে যেসব সংস্কার দরকার সেদিকে বেশি করে নজর দেবে। খানিকটা ইঙ্গিত ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা দেখতে পাচ্ছি। এতে আমাদের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরা হয়েছে। সাধারণত ইশতেহারে অঙ্গীকার করা হয়, কিন্তু এর বিস্তারিত বলা হয় না। সেদিক থেকে এবারের ইশতেহারটি ব্যতিক্রম। এ জন্য চলমান যে অর্থনৈতিক সংস্কারগুলোর কথা আমি বলেছি, এগুলো সরকারও স্বীকার করেছে। এখন কীভাবে এসব মোকাবিলা করা যায়, তার একটি ইঙ্গিতও দিয়েছে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিয়ে সাবেক গভর্নর বলেন, প্রথমত সুদ হার ব্যবহার করে চাহিদার ব্যাপারটিকে মোকাবিলা করতে হবে। দ্বিতীয়ত কৃষি ও শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি করে সরবরাহের দিকটি ঠিক রাখতে হবে। পাশাপাশি যারা মূল্যস্ফীতির শিকার, নিম্ন আয়ের মানুষ ও অনানুষ্ঠানিক কাজ করে এমন অতি দরিদ্র মানুষের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি জোরদার করতে হবে। বিশেষ করে কম দামে চাল বিক্রি করা, বিভিন্ন ভাতা জোরদার ও অব্যাহত রাখতে হবে।

মূল্যস্ফীতির আরেকটি কারণ ছিল ডলার ও টাকার বিনিময় হার। ডলারের দামে বড় ধরনের হেরফের হয়ে গেছে। সেটা নিয়ন্ত্রণ হলে বাণিজ্যে ভারসাম্য আসবে বলে মনে করেন আতিউর রহমান।

নতুন বছরে আর্থিক খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনা জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি নির্বাচনটি ঠিকঠাক হয়ে যায় এবং এ সরকারই আবার ক্ষমতায় আসে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখিত সামষ্টিক অর্থনীতির পাশাপাশি আর্থিক খাতে যে সুশাসনের কথা বলেছে, দুর্নীতি আছে- সেগুলো মোকাবিলার যে দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা বলেছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করলে মুদ্রাস্ফীতির আঘাত দূর হয়ে যাবে। এ সংস্কার কার্যক্রমগুলো যদি ঠিকভাবে ধরা যায় তাহলে সামষ্টিক অর্থনীতিতেও স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি ফিরে আসবে। দারিদ্র্য নিরসনে আমরা যে সাফল্য অর্জন করেছি তা আরও বেগবান করা গেলে দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত ও উদ্যোক্তাবান্ধব করা সম্ভব হবে।

সাবেক গভর্নর আরও বলেন, বাংলাদেশের তিন ভিত্তি কৃষি, প্রবাসী আয় ও গার্মেন্টস। এর মধ্যে দুটি (রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়) আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল। গতবার ১২ লাখের বেশি মানুষ দেশ থেকে বিদেশে কাজ নিয়ে গেছে। তারা যে পরিমাণ প্রবাসী আয় পাঠাচ্ছে তা যথেষ্ট নয়। কারণ, তাদের আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠাতে পারছি না; তাদের পাঠানো ডলারের বিনিময় হার এখনো বাজার নির্ভর হয়ে ওঠেনি। আমরা আশা করছি নতুন বছরে এটি বাজারের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া হবে। এটি খুবই মুনশিয়ানার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা হবে। এটা করা সম্ভব হলে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ আরও বাড়বে।

২০২৩ সালের শেষ দুই মাসে রপ্তানিতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। নতুন বছর এই আঘাত নিয়েই শুরু হয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ড. আতিউর রহমান বলেন, রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে আমাদের বাজার বহুমুখী করতে হবে। যে বাজার আছে সেটা যেন হাতছাড়া না হয়ে যায়, সেজন্য আমাদের সব ধরনের অর্থনৈতিক নীতি, কূটনীতি, মার্কেটিং কৌশল এবং পণ্যের গুণগত মান উন্নত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, কৃষিতে বাংলাদেশ ভালো করছে। একটি ক্ষেত্রে অবশ্য আমাদের ঘাটতি আছে। আলু, রসুন, পেঁয়াজের মতো মসলা পণ্য আমাদের আমদানি করতে হয়। এগুলো নিয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। ঘাটতি দেখা দিলে কতিপয় ব্যবসায়ী সুযোগ নেয়। এ জন্য সরবরাহ বাড়াতে হবে। দেশের ভেতরে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বেশি করে প্রণোদনা দিতে হবে। আশপাশের দেশ থেকে আমদানি করতে মধ্যমেয়াদী চুক্তি করতে হবে। প্রতি বছর নির্দিষ্ট পরিমাণ পাওয়া যাবে- এমন কোটা পদ্ধতি সৃষ্টি করতে হবে।

ভোগ্যপণ্য ও গম আমদানি করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে যুদ্ধের কারণে যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে তা এখনো বিদ্যমান। এগুলো খুব বুদ্ধি দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে পেমেন্ট করতে সমস্যা হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সমস্যা হচ্ছে। এ ধরনের পণ্য কানাডা বা আরও কোথায় পাওয়া যায় তা খুঁজতে হবে। মোট কথা পণ্য সংগ্রহের বিষয়টি বহুমুখী করতে হবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email