অনলাইন ডেস্ক: চট্টগ্রাম নগরীতে ফুটপাত দখল ও হকারমুক্ত রাখার দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানবন্ধন করে জামালখান কুসুম কুমারী সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী। পরে সেখানে আলকরণ নূর আহমেদ সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের আরও অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে এসে জড়ো হয়।
এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে থাকা পোস্টারে লেখা ছিল রাস্তা, ফুটপাত কার? হকার না পথচারীর, রাস্তা ও ফুটপাত জনগণের জন্য উম্মুক্ত চাই এবং হকারমুক্ত ফুটপাত চাই।
মানববন্ধনে আসা কুসুমকুমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীরা অনেকেই পায়ে হেঁটে স্কুলে আসি। বাংলাদেশে ট্রাফিক জ্যাম সবসময় লেগে থাকে। এতে দুর্ঘটনার একটি বিষয় থেকে যায়। তাই শিক্ষার্থী ও পথচারীরা নির্বিঘ্নে হাঁটতে ফুটপাত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেসব ফুটপাত দখল করে রাখা হয়েছে।’
‘আমরা সেখানে হাঁটতে পারি না। তাই শিক্ষার্থীরা ফুটপাতে হাঁটতে না পেরে রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য হয় এবং দুর্ঘটনার শিকার হয়। আমরা আমাদের ফুটপাত চাই। যেখানে আমরা নির্বিঘ্নে হাঁটতে পারব।’
জান্নাত নূর নামে সপ্তম শ্রেণীর আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ফুটপাতে বিভিন্নরকম জিনিসের দোকান বসে। রাস্তা ব্লক হয়ে যায়। তাই আমাদের হাঁটাচলা করতে অসুবিধা হয়। বাধ্য হয়ে রাস্তায় হাঁটতে হয়। আমাদের অনেক বন্ধু রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। আমরা আমাদের ফুটপাত ফেরত চাই।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লোকমান উদ্দিন বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরকে যানজট ও হকারমুক্ত নগরী করার লক্ষ্যে আমরা সবাই এখানে দাঁড়িয়েছি। আমরা ফুটপাত চাই, পথচারীর অধিকার চাই। আমরা যাতে নির্বিঘ্নে ফুটপাতে হাঁটতে পারি সে অধিকার নিশ্চিত করতে আমাদের এ মানবন্ধন। আজ একযোগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৪৮টি স্কুল ও ১৭টি কলেজের প্রায় ৫০ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী পুরো শহরজুড়ে মানববন্ধন করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা পায়ে হেঁটে স্কুলে আসে। পাথরঘাটা, কাজির দেউড়ি, দেওয়ানবাজার, টেরিবাজার, চকবাজার, বহদ্দারহাটসহ নগরীর বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীরা পড়তে আসে। অনেকেই পায়ে হেঁটে স্কুলে আসে। অনেক শিক্ষার্থীই আমাদের বিভিন্ন রকম অভিযোগ দিয়েছেন। পথচারীরাও ফুটপাতে নির্বিঘ্নে হাঁটতে পারে না। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে পায়ে হেঁটে স্কুলে আসতে পারে।’
জানতে চাইলে চসিকের শিক্ষা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ও কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বলেন, ‘ফুটপাত দখলমুক্ত করতে আমাদের শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা অনেকদিন ধরেই দাবি করে আসছিল। ফুটপাতগুলোতে হকাররা বসে থাকায় তারা রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য হত। এতে অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ওড়না বা কাপড় গাড়ির সঙ্গে লেগে ছিঁড়ে গিয়েছে। এরকম অনেক অভিযোগ আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মেয়র তাদের সব অভিযোগ শুনে চট্টগ্রাম নগরীকে হকারমুক্ত করতে রাস্তায় রাস্তায় অভিযান চালাচ্ছে। তবুও কিছু কিছু জায়গায় আবারও হকার বসছে। তাদেরকে স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করার দাবিতে সিটি করপোরেশনের সব স্কুল আজ মানববন্ধন করবে বলে শুনেছি। তবে সব স্কুল ও কলেজ নেমেছে কিনা সেটা বলতে পারব না।’
প্রসঙ্গত, গত ৮ ফেব্রুয়ারি নগরীর নিউমার্কেট মোড় থেকে নতুন রেলস্টেশন, রিয়াজউদ্দিন বাজার, পুরাতন রেলস্টেশন, ফলমণ্ডি, তামাকমুণ্ডি লেইন ও আমতলসহ প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা থেকে হাজারেরও বেশি হকার উচ্ছেদ করে সিটি করপোরেশন। এসব এলাকার ফুটপাত থেকে সড়কের একাংশ দখলে নিয়ে এসব হকার পোশাক, মোবাইল, জুতা, তৈরি খাবারসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে আসছিল। ফুটপাত ও সড়কে বিভিন্ন অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের কারণে এসব এলাকায় নিয়মিত যানজট লেগে থাকতো।
উচ্ছেদ অভিযানের সময় হকাররা বিক্ষোভ করেছিলেন। পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ নিয়ে হকাররা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। পর দিন হকারদের কেউ কেউ আবারও বসতে চাইলে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা গিয়ে তাদের সরিয়ে দেন। এরপরও হকাররা সড়ক ও ফুটপাতের বিভিন্ন অংশ দখলে নিতে শুরু করলে ১২ ফেব্রুয়ারি ফের অভিযান চালায় সিটি করপোরেশন। এ সময় হকারদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ভাংচুর করা হয় সিটি করপোরেশনের যানবাহন। পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় হকারদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের হয়েছে।
এ অবস্থায় উচ্ছেদ হওয়া হকারদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের পুনর্বাসনের দাবি তোলেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। হকাররাও ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছে।
এমটি/ এআর