স্টাফ রিপোর্টার: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, বাংলাদেশে বিগত ২৩ বছরে যত ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছে গত ২০২৩ সালে এক বছরেই তার থেকে বেশি রোগী আক্রান্ত হয়েছে। অর্থাৎ গত ২৩ বছরে দেশে মোট ডেঙ্গু রোগী ছিল প্রায় আড়াই লক্ষ। কিন্তু গত ২০২৩ সালে মাত্র এক বছরেই রোগী আক্রান্ত হয় প্রায় ৩ লাখ। এই সংখ্যা শুধু হাসপাতালে ভর্তিকৃতদের। এর বাইরে তো আরও রোগী ছিলই। এতেই বোঝা যায়, ডেঙ্গু রোগী নিয়ে আমাদের এবার আগে থেকেই সতর্ক না হয়ে কোন উপায় নেই।

মন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে হলে আমাদেরকে এক দিকে যেমন মশা মারতে হবে, আবার অন্যদিকে প্রাদুর্ভাব কমাতে আমাদেরকে আগে থেকেই সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। সবার আগে আমাদের নিজ নিজ এলাকার কমিউনিটি সম্পৃক্ততা ও সচেতনতা বাড়াতে হবে। মশা মারার জন্য ওষুধ যেমন মান সম্পন্ন কিনতে হবে তেমনি আমাদেরকে ভালো ট্রিটমেন্ট ব্যাবস্থাও রাখতে হবে। তবে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আজ থেকে যেভাবে উদ্যোগ নেওয়া শুরু হলো, এটিকে চলমান রেখে সব সেক্টরকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।

মঙ্গলবার দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনের সভাপতিত্বে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব হ্রাসকরণ ও চিকিৎসাসেবা সুসমন্বিত করণ বিষয়ক একটি বিশেষ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো: জাহাঙ্গীর আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম, বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক প্রফেসর আবদুল্লাহ, স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক জামাল উদ্দিন চৌধুরী, বিএসএমএমইউ এর ভিসি শারফুদ্দিন আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা) অধ্যাপক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরাসহ মন্ত্রণালয়ের ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের সাথে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্যবৃন্দ।

সভায় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে লক্ষ্য করে বলেন, “ সিটি কর্পোরেশন থেকে প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে লার্ভার তথ্য জানতে হবে। নিয়ম না মানলে জরিমানার ব্যাবস্থা করতে হবে। দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় যারা বাঁধা হবে তাদেরকে জরিমানা করাসহ আরো কঠোর নিয়ম হাতে নিতে হবে।

সভায় ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দক্ষিণের মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেন, “ ডেঙ্গু আক্রান্ত সব রোগীর সময় মতো চিকিৎসা সেবা দিতে হবে। কোন রোগীকে চিকিৎসা না দিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে পাঠানো যাবে না। ২০২৩ সালের ডেঙ্গুতে নারী ও শিশু বেশি কেন মারা গেল সেটি নিয়ে গবেষণা করে ব্যবস্থা নিতে হবে। আর, মানুষকে সঠিক তথ্য জানাতে হবে।”

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ করতে আমাদেরকে এক হয়ে মাঠে নেমে কাজ করতে হবে। কোন ভেদাভেদ যেন আমাদের মধ্যে না হয়। করোনা যেভাবে আমরা সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করেছি, ডেঙ্গুও আমরা এক হয়ে সমন্বিতভাবে প্রতিরোধ করবো। একই সাথে এ বছর ওষুধ কিনতে আরো বেশি সতর্কতা অবলম্বন করে পরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই করে আমাদেরকে ওষুধ কেনার উদ্যোগ নিতে হবে।”

সভায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, করোনার মত ডেঙ্গু প্রতিরোধে এবছর আমরা আগেভাগেই এই সমন্বয় সভার আয়োজন করেছি। আশা করছি, এ বছর সকলের সাথে সমন্বয় করে আমরা ডেঙ্গু প্রতিরোধে এক যোগে কাজ করে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুহার অনেক কমিয়ে আনতে সক্ষম হবো।

সভা শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী উপস্থিত মিডিয়া কর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় তাঁর মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।

এমটি/ এএটি

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email