অনলাইন ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ শান্তিপ্রিয় দেশ। তবু আমাদের দুর্ভাগ্যের বিষয় দেশের অভ্যন্তরে কিছু লোক খুন-খারাবি, অগ্নিসন্ত্রাস, অনেক কিছু করে থাকে। তাদের সুমতি হোক। একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকলে একটি দেশ যে এগিয়ে যেতে পারে উন্নতি করতে পারে; তার প্রমাণ আমরা করেছি। আজ বাংলাদেশকে অন্তত বিশ্বে একটা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। এই যাত্রা অব্যাহত থাকুক। আমাদের দেশের মানুষ বিশ্বে মাথা উঁচু করে সম্মানের সঙ্গে চলুক সেটাই আমরা চাই।’
সোমবার (২৫ মার্চ) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৪ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে, স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত ১০ ব্যক্তির হাতে স্বাধীনতা পুরস্কারের সম্মাননা তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০২৪ সালে ১০ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এবার ‘স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ’ ক্ষেত্রে তিনজন, ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ ক্ষেত্রে একজন, চিকিৎসাবিদ্যায় একজন পুরস্কার পান। এছাড়া সংস্কৃতিতে, ক্রীড়ায় একজন করে এবং সমাজসেবায় তিনজনকে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ এ পদকে ভূষিত করা হয়।
স্বাধীনতা সংগ্রামের আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা তুলে ধরে তুলে ধরার পাশাপাশি ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর এই বাংলাদেশের কি অবস্থা হয়েছিল সেটাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্টের পর আমরা কি দেখেছি? বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিল। ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ ছিল। যে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে আমাদের এদেশের মানুষ বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীনতা এনে দিয়েছে সেই জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ ছিল। জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার হবে না সেই আইন করে তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল বিভিন্ন দূতাবাসের চাকরি দিয়ে, রাজনীতি করার অধিকার দিয়ে।’
মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল এবং বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লক্ষ্য থেকে উল্টো পথে যাত্রা শুরু করেছিল এটাই ছিল জাতি হিসাবে আমাদের দুর্ভাগ্যের বলেও দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা চেষ্টা করছি দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে এবং বাংলাদেশের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি বলেও অভিহিত করেন প্রধানমন্ত্রী।
রমজান মাসে দেশের মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, তার জন্য আমরা মানুষের মাঝে বিনা পয়সায় খাদ্য বিতরণ করারও প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ইফতার পার্টি বাদ দিয়েছি, আমাদের নেতাকর্মী, প্রতিষ্ঠান সবাইকে আহ্বান করেছি, ইফতার পার্টি না করে সাধারণ মানুষের মধ্যে ইফতার বণ্টন করতে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে। আমরা খাওয়ার বিষয়টা বাদ দিয়ে দেওয়ার দিকে মনোযোগ দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। আমাদের ঘোষণা ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ; আজ আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন জনগোষ্ঠী আমরা গড়ে তুলতে চাই। ২০৪১ সালের বাংলাদেশ কেমন হবে? সেই প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। ২১০০ সালের বাংলাদেশ; এই বদ্বীপ উন্নত হবে তার জন্য ডেল্টা প্লান প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন শুরু করেছি।’
একদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি বাস্তবায়ন অপরদিকে আমরা আমাদের নিজস্ব লক্ষ্য স্থির করে কাজ করছি বলেও জানান সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো। এবারে স্বাধীনতা দিবস সামনে রেখে এটাই আমাদের প্রত্যয়।’
২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তা পালন করার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি গণহত্যা দিবসে গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের প্রতি জাতির পক্ষ থেকে ঘৃণা জ্ঞাপন করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা যদি বিশ্বে তাকাই সেই ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরাইল কর্তৃক গণহত্যা চালানো হয় হচ্ছে। বাংলাদেশ তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছে এবং আমরা ফিলিস্তিনের সঙ্গে আছি।’
তিনি আরও বলেন, আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। আমরা ভুক্তভোগী, তাই আমরা যুদ্ধ চাই না। এমনকি আমরা যে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি সেখানেও আমাদের প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমরা সংঘাত চাই না। আর সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়; জাতির পিতা যে নীতিমালা আমাদের দিয়ে গেছেন সেটাও আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে যাচ্ছি এবং সেটা আমরা পালন করে যাবো।
এমটি