স্টাফ রিপোর্টার: দেশব্যাপী হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক এবং আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টারের নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে। নাম বদলে এসব প্রতিষ্ঠানের নাম জেলার নামে হবে বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের নির্বাহী কমিটির সভাপতি মো. নাহিদ ইসলাম। আজ ঢাকার আইসিটি টাওয়ারে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের নির্বাহী কমিটির ৩২তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ জসীম উদ্দিনের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বুধবার (২৮ আগস্ট) অনুষ্ঠিত সভায় উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘হাইটেক পার্কের জমি বরাদ্দ দেওয়া এবং বাতিল করার বিষয়ে অনেক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়ে কোনো অনিয়ম, দুর্নীতি হয়েছে কি না, তা পর্যালোচনা করা দরকার। যে উদ্দেশ্য নিয়ে দেশব্যাপী হাইটেক পার্ক তৈরি করা হয়েছিল, সে অনুযায়ী প্রত্যাশিত ফল আমরা পাইনি। না পাওয়ার ক্ষেত্রে কতটুকু রাজনৈতিক কারণ ছিল, কী পরিমাণ দুর্নীতি ছিল বা আমাদের সক্ষমতার মধ্যে কোনো ঘাটতি ছিল কি না, এ বিষয়ে আরও পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।’

সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ মুগ্ধ, আবু সাঈদসহ আরও কয়েকজনের নামে হাইটেক পার্কের ডরমিটরির নামকরণের প্রস্তাব করা হলে উপদেষ্টা তাতে সম্মত না হয়ে বলেন, এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের মতো তাড়াহুড়া করার দরকার নেই। আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতি এমনভাবে ধারণ করা হবে, যাতে সেগুলো স্থায়ী হয়।

সভায় যশোর জেলায় অবস্থিত শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের বর্তমান প্রপার্টি ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে (পিএমসি) অব্যাহতি দিয়ে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির মাধ্যমে স্বল্প সময়ের মধ্যে নতুন পিএমসি নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কার‌ওয়ান বাজারে অবস্থিত জনতা টাওয়ারে (ভিশন ২০২১ টাওয়ার ১ সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক) এখন যে প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে, সেগুলোর বকেয়া ভাড়া পরিশোধ এবং সেগুলোকে রেখেই টাওয়ারটি সংস্কার করা যায় কি না, সেই বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়।

প্রসঙ্গত, স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তির প্রতিষ্ঠানকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট সংযোগসহ স্বল্পমূল্যে অফিস স্থাপনের সুবিধা এবং দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ বাড়াতে সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপনা নির্মাণ করে। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এই হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক এবং আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার নির্মাণ ও পরিচালনা করে থাকে। নির্মাণ সম্পন্ন হয়ে এখন পর্যন্ত দেশে আটটি হাইটেক পার্ক চালু হয়েছে। নির্মাণাধীন রয়েছে সাতটি পার্ক এবং অনুমোদিত হয়ে আছে আরও আটটি হাইটেক পার্ক।

চালু হওয়া আটটি হাইটেক পার্কের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে রয়েছে দুটি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে একটি, তাঁর ভাই শেখ কামালের নামে তিনটি ও শেখ জামালের নামে একটি। চালু হওয়া পার্কগুলো হলো গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি, যশোরে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, ঢাকার কারওয়ান বাজারে জনতা টাওয়ার সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, নাটোরের শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার, সিলেটের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক, চট্টগ্রামে মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়—চুয়েটে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার, চট্টগ্রামে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার ও খুলনায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার।

নির্মাণাধীন হাইটেক পার্কগুলো হলো ঢাকার ডেমরায় সিটি হাইটেক পার্ক, রংপুরে এম এ ওয়াজেদ মিয়া হাইটেক পার্ক, খুলনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক, মাগুরায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার, ঢাকায় মহাখালী আইটি ভিলেজ, রাজশাহীতে বরেন্দ্র সিলিকন সিটি ও মাদারীপুরে শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি (শিফট)। বিগত সরকারের সময় অনুমোদন পেয়েছে আরও আটটি হাইটেক পার্ক প্রকল্প। এগুলো জেলা বা উপজেলার নামেই রয়েছে। এই পার্কগুলোর অবস্থান ময়মনসিংহ, নাটোর, জামালপুর, কেরানীগঞ্জ, কুমিল্লা, বরিশাল, কক্সবাজার ও গোপালগঞ্জে।

হাইটেক পার্কে কর্তৃপক্ষের নির্বাহী কমিটির আজকের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ব্যক্তির নামে থাকা দেশের হাইটেক পার্ক ও এ রকম প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তিত হয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা বা এলাকার নামে হবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email