মহিউদ্দিন তুষার: কোন প্রকার নিয়ম না মেনেই রাজধানীসহ সড়ক-মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অটোরিকশা। বড় যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেপরোয়া গতিতে চলাচলের কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, তৈরি হচ্ছে যানজট। মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচলে হাইকোর্ট ও সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব যান। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই।
সপ্তাহের শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তীব্র যানজটে অসহনীয় দুর্ভোগে পড়ছেন নগরবাসী। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে যানবাহনগুলোকে। ফলে, অফিসে আসা এবং ঘরমুখো মানুষসহ কর্মজীবীরা বিপাকে পড়েছেন প্রতিদিন। যানজটের জন্য দায়ী করা হচ্ছে তিন চাকার যানবাহনকে। মহাসড়কে হুটহাট ব্রেক করে যাত্রী তোলা। বেশির ভাগ অটোচালকের রাস্তার সিগন্যাল কিংবা গাড়ি চালনার অন্যান্য নিয়ম কানুন কোনটাই না মানা। ইন্ডিকেটর ব্যবহার না করা। যার কারনে যানজট বেশি হচ্ছে।
২০১৫ সালের ১ আগস্ট থেকে সারা দেশের মহাসড়কে অটোরিকশা ও অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, সড়কে নিরাপত্তা বিধানে ১ আগস্ট থেকে সারা দেশের জাতীয় মহাসড়কে থ্রি হুইলার অটোরিকশা এবং সকল শ্রেণির অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখন থেকে শুধু ২২টি জাতীয় মহাসড়কে বন্ধ থাকবে অটোরিকশা। প্রজ্ঞাপনের পর থেকেই সরকারের দেয়া নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাজধানীসহ মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচল করতো। যার কারনে প্রায় সময়ই ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটনার ঘটতো। চলতি বছরের ১৫ মে মহাসড়কের পাশাপাশি রাজধানীতেও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। এর পরপরই রাজধানীতে ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন রিকশা, ব্যাটারি রিকশা-ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ। তার পর চলতি বছরে ২০ মে ঢাকা সিটিতে ব্যাটারি চালিত রিকশা চালু রাখার নির্দেশ দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ২২টি মহাসড়কে আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ থাকবে এমন সিন্ধান্ত নেয়া হয়।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের আগ থেকেই রাজধানীসহ মহাসড়কে তিন চাকার যানের দৈারাত্ব ছিল। সরকার পতনের পর কিছুদিন রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় ঐ সময় শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করে। এই সুযোগে ব্যাটারিচালিত সব অটোরিকশা সড়কে চলে আসে। যা এখন বিষফোঁড়ায় রূপ নিয়েছে।

গতকাল রোববার রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, শনির আখড়া, গুলিস্তান, পল্টন, শাহবাগ, মগবাজার, কারওয়ান বাজার, বাড্ডা, উত্তরা সড়কে তীব্র যানজট দেখা যায়। থেমে থেমে চলতে দেখা যায় গাড়ি। তীব্র গরমের সঙ্গে যানজটে ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের।

কাকরাইল মোড়ে একটি বাসে কথা হয় এক ব্যবসায়ী সঙ্গে। তিনি বলেন, সদরঘাট থেকে গাড়িতে উঠেছি, এক ঘণ্টায় মনে হয় তিন কিলোমিটার আসছি। প্রতিটি মোড়ে সিগন্যাল। এর মধ্যে গরমে ঘামতে ঘামতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। বনশ্রী যাবো, পৌঁছাতে কতক্ষণ লাগবে জানি না।
রাজধানীর পল্টন মোড়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, প্রতিদিন এই মোড়ে ঝামেলা হয়। কেউ কথা শোনে না। গুলিস্তান জিরো পয়েন্টের দিকে গাড়ি আগায় না। যে যেভাবে পারে সিগন্যাল ছাড়াই ফাঁকা দেখলে চলে যায়। তিনি আরও বলেন, আগে রাস্তার এতটা তিন চাকার যান ছিলো না এখন যেমনটা দেখা যাচ্ছে। রাজধানীতে ব্যাটারী চালিত রিকশা না থাকলে এতটা যানজট হবে না।

সরকারের দেয়া আইন অমান্য করে কেন রাজধানীসহ মহাসড়কে ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা চালাচ্ছেন জানতে চাইলে একাধিক চালক বলেন, মহাসড়কে না আসলে যে টাকা ইনকাম হয় তা দিয়ে সংসার চলে না। অল্প পথের যাত্রীতে টাকা কম। মহাসড়কে দূরের যাত্রী পাওয়া যায় সেজন্য টাকাও বেশি। এত পরিমান গাড়ী যে মহল্লার ভিতরে চালালে যাত্রী পাওয়াই যায় না। তবে, এখন আগের তুলনায় ইনকাম বেশি। আগে রাস্তায় পুলিশকে টাকা দিতে হতো এখন দিতে হয় না। এছাড়া আগে নানা চান্দা ছিলো এখন তা দিতে হচ্ছে না। তবে শ্রীর্ঘই চান্দা শুরু হবে এমনটা জানান চালকরা।
মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধের দাবিতে বাস ধর্মঘটের ডাক দেয় নওগাঁ জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন। গত ১ সেপ্টেম্বর এ ধর্মঘট পালন করেন। তারা বলেন, সরকারি আইন অনুযায়ী মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল নিষিদ্ধ। প্রশাসনের নিষেধ করা সত্ত্বেও অটোরিকশার চালকেরা মহাসড়কে জোর করে গাড়ি চালিয়ে আসছেন। এতে সড়কে কোনো শৃঙ্খলা থাকছে না। বেপরোয়াভাবে মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সেখানে এখনও আগের মতই তিন চাকার যানবাহন চলাচল করছে।
মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা বলেন, সরকারি আইন অনুযায়ী মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল নিষিদ্ধ। প্রশাসন ও মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও অটোরিকশার চালকেরা মহাসড়কে জোর করে গাড়ি চালিয়ে আসছেন। এতে সড়কে কোনো শৃঙ্খলা থাকছে না। বেপরোয়াভাবে মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। এর একটা সমাধান হওয়া দরকার।

সরকারের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। যানজটের কারনে প্রতিদিনই মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। কিভাবে সমাধান করা যায় শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email