• সাড়ে ৩ মাস পর ক্লাসে ফিরে স্বস্তি শিক্ষার্থীদের
  • শিক্ষার্থীদের একটি অংশের প্রায় ২ বছরের রয়েছে সেশনজট

মহিউদ্দিন তুষার
দীর্ঘ সাড়ে ৩ মাস পর ক্লাসে ফিরেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। গত ১০ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস এতদিন বন্ধ ছিল না। রোববার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘোষণা দেওয়ার পর শুরু হয় ক্লাস। যেসব ডিপার্টমেন্টে পরীক্ষা চলছিল বা রুটিন দেওয়া হয়েছিল, নতুন করে তাদের রুটিন প্রকাশ করা হয়নি এখনও। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, দ্রুতই তাদের পরীক্ষার রুটিনগুলো প্রকাশ করা হবে।

গত ২ জুন গ্রীষ্মকালীন ছুটি ও ঈদুল আজহার বন্ধ শেষে ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস খুললেও সরকার ঘোষিত সার্বজনীন পেনশন স্কিমের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা। ৫ জুলাই থেকে কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। উভয় পক্ষই দাবি না মানা পর্যন্ত ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয়। সেই থেকে বিভিন্ন ঘটনায় প্রায় সাড়ে তিন মাস পর ক্লাসে ফিরেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ১০ আগস্ট পদত্যাগ করেন উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। এরপর ২৭ আগস্ট নতুন উপাচার্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

নিয়োগের পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয় হল, বিভাগ, অফিস প্রধান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন অংশীজনের সাথে আলোচনা করেন। এসময় অফিস কার্যক্রম স্বাভাবিক হলেও ক্লাস খোলেনি। পরে ১৩ সেপ্টেম্বর এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় ক্লাস শুরুর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।

অভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা। ফ্যাসিবাদের পতনের পর ক্যাম্পাসে ফিরতে পেরে তারা স্বস্তি বোধ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিপীড়নমুক্ত এই পরিবেশ বজায় থাকবে বলেও তারা প্রত্যাশা করছেন।

করোনা মহামারি ও বিভাগগুলোর সদিচ্ছার অভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের একটি অংশ প্রায় দুই বছরের সেশনজটে রয়েছে। বিশেষত করোনার আগে ২০১৯-২০ সেশনে যারা ভর্তি হয়েছেন। করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় প্রশাসন লস রিকভারি প্ল্যানের আওতায় ছয় মাসের সেমিস্টার ৪ মাসে নিলেও অনেকগুলো ডিপার্টমেন্টই তা ফলো করে। বিশেষত সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিপার্টমেন্টগুলো।

যেখানে কলা অনুষদের বেশ কিছু ডিপার্টমেন্ট পরীক্ষা শেষে রেজাল্টও দিয়ে দিয়েছে এবং বাকি ডিপার্টমেন্টগুলোর পরীক্ষা শুরু হয়েছিল, রুটিন দিয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে হতাশা থাকলেও ক্লাসে ফিরতে পেরে মোটামুটি স্বস্তিতে তারা। অনুষদের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা সেশনজটে পড়ে আছি, কলা অনুষদসহ বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের বন্ধুরা, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুরা তাদের কোর্স সম্পূর্ণ করে ফেলেছে। আমাদের এখনও এক সেমিস্টার বাকি। বছরের শেষ দিকে এখানে চাকরির সার্কুলার হতে পারে। এই বছরের মধ্যেই অনার্স শেষ না হলে আমরা তা মিস করবো। সবকিছু মিলিয়ে প্রশাসনের উচিত এ বছরের মধ্যেই আমাদের অনার্স শেষ করে দেওয়া। বিষয়গুলো নিয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর মাঝে হতাশা কাজ করছে। তবে ক্লাসে ফিরতে পেরে আপাতত স্বস্তি এসেছে।

আরেক শিক্ষার্থী সাদমান বলেন, ক্লাস করতে না করতে শরীর ও মনে অবসাদ সৃষ্টি হয়েছিলো। দ্বিতীয় স্বাধীনতার পর থেকে সারাদিন ফোন চালানো ব্যতীত অন্য কোন কাজ করতাম না। এখন অন্তত ক্লাস শুরু হওয়ায় এদিকে মনোযোগ আসবে। দীর্ঘদিন পর ক্যাম্পাসে, ক্লাসে ফিরতে পেরে ভালো লাগছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের অষ্টম সেমিস্টারের রুটিন দিয়েছিল, পরীক্ষাও হয়েছিল একটি কোর্সের। আজ থেকে ক্লাস শুরু হয়েছে আবার। আমাদের পরীক্ষা নিয়ে এখনও নতুন রুটিন দেওয়া হয়নি। ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, খুব শিগগিরই রুটিন প্রকাশ করে পরীক্ষা নেওয়া হবে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা বলেন, অনেকদিন পর আবারও বন্ধুদের সঙ্গে ক্লাস শেষে টিএসসি এলাম। রাষ্ট্রের চলমান অনেক বিষয়ে আমরা আড্ডা দিয়েছি। ক্লাস খুলে দেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের এভাবে ফিরতে পারা বেশ ভালো লাগার।

এমটি/ এএটি

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email