পশ্চিমবঙ্গের বাজারে ১ কেজির ওপরের ইলিশ পাইকারি ১৮০০ রুপি। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ইলিশ ২০০০ রুপি থেকে ২২০০ রুপি, আর ৭০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি সাইজের বাংলাদেশের ইলিশ প্রতিকেজি বিক্রি ১৪০০ থেকে ১৬০০ রুপি।

বিশেষ প্রতিবেদক: ভারতীয় বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকদের ভাষায়, তৃষ্ণার্ত চাতক পাখির মতো অপেক্ষারত ছিলেন তারা। সেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশের ইলিশ এলো পশ্চিমবঙ্গের বাজারে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এবার চুটিয়ে ব্যবসার পালা। বাংলাদেশ প্রতিকেজি ইলিশ মাত্র ১২০০ টাকা (৭৯২ রুপি) কেজি দওে ভারতে রপ্তানি করেছে। যখন বাংলাদেশের বাজারে ১ কেজি ওজনের ইলিশের দাম ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা। সেই ইলিশই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাজাওে কেজি ২২০০ রুপি।

ইলিশের বাড়ি বাংলাদেশ থেকে যখন ভারতে মাত্র ১২০০ টাকা কেজি (৮২৮ রুপি) রপ্তানি করা হচ্ছে, সেই ইলিশ হাওড়া-বারাসাত বাজারে ২০০০ থেকে ২২০০ রুপি কেজি ধরে বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশের মাছ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ইলিশ রপ্তানির মোড়কে প্রায় প্রতিটি সীমান্ত দিয়েই কালো পথে দেদারসে পাচার হচ্ছে। রপ্তানি এবং পাচারের ইলিশ দিয়েই ভারতের বাজারে হচ্ছে রমরমা ব্যবসা।

পূজা উপলক্ষ্যে গত শুক্রবার কলকাতায় বাজারে পৌছায় ৫০ টন বাংলাদেশের ইলিশ। আগামী ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ধাপে ধাপে ২ হাজার ৪২০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির কথা রয়েছে। প্রথমদিন পশ্চিমবঙ্গের বাজারে ইলিশের দাম চড়া থাকলেও চাহিদাও রয়েছে প্রচুর।

পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতের বাসিন্দা প্রফেসর ও গবেষক শেখ কামাল উদ্দিন উচ্ছ্বসিত কণ্ঠেই জানালেন, বারাসাত বাজারে ইলিশের আমদানি হয়েছে। তবে, তিনি এবং অপর কলেজ শিক্ষক বন্ধু মিলে আড়ৎদারকে বলে রেখেছেন। আড়ৎদার দু’একদিনের মধ্যে মধ্যেই কেজির ওপরে ওজনের মাছের সন্ধ্যান দেবে। সেই মাছ কম করে হলেও ২২০০ রুপির নিচে বাজারের তলিতে ওঠবে না। তবে আগের সপ্তাহে ইলিশ রপ্তানি হবে না এমন খবরে মর্মাহত হয়েছিলেন এই কলেজ শিক্ষক।

সংবাদকর্মী পৌলোমী হালদার জানালেন, কেজি ওজনের মাছ ১৮০০ রুপি থেকে ২২০০ রুপির কম নয়। তারপরও কলকাতায় বাংলাদেশের ইলিশের চাহিদা ব্যাপক। বাংলাদেশের ইলিশের গন্ধ শুকেই এক থালা ভাত খাওয়া যায়। সঙ্গে শুকনো লঙ্কা ভাজা।

বাচিক শিল্পী চন্দ্রিকা বন্দোপাধ্যায় জানালেন, কেজি সাইজের ইলিশ ২০০০ রুপির নিচে নয়। তবে, বাংলাদেশের ইলিশ কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন বাজারে পাওয়া যাবে, এটাই পূজার মৌসুমে বড় খবর।

শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই কলকাতা ও অন্যান্য বাজারে দেদার বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশের ইলিশ। দাম নিয়ে কেউ ভাবছে না। বাংলাদেশের ইলিশ কিনতে হবে, সেটাই বড় কথা। বাংলাদেশে যে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ টাকা কেজি, সেই ইলিশ ভারতের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ রুপি। বাংলাদেশে যে ইলিশ ১৮০০ টাকা কেজি, সেই ইলিশ ভারতের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২২০০ রুপি কেজি।

ভারতের ফিস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ জানিয়েছেন, প্রথমদিন বাংলাদেশের ইলিশের দাম বেশি। ভারতের পাইকারি বাজারে ১ কেজির ওপরের ইলিশের দর উঠেছে ১৮০০ রুপি। সেই ইলিশ খুচরা বাজারে প্রতিকেজি বিক্রি হবে ২ হাজার রুপি ২২০০ রুপি দরে। এর আগে বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বেনাপোল হয়ে ভারতের পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে যায় ৫০ টন বাংলাদেশের ইলিশের চালান। সেখান থেকে শুক্রবার সকালে সেসব ইলিশ পৌঁছে যায় হাওড়ার পাইকারি মাছ বাজারে। ভারতে বাংলাদেশের ইলিশ পৌছানোয় অন্য মাছের দাম কমেছে। সবারই নজর এখন বাংলাদেশের ইলিশের দিকে। তবে প্রথম ধাপে বাজারে চাহিদা থাকায় দাম আপাতত সাধারণের নাগালের বাইরে।

তা সত্ত্বেও প্রথম দিনেই বাজারে মাছ বিক্রেতাদের ভিড় ছিলো। সবাই নিজেদের সাধ্যমতো সংগ্রহ করছে বাংলাদেশের ইলিশ। বাংলাদেশের ইলিশ আসার খবর পেতেই হাওড়ার পাইকারি মাছ বাজারে আসেন দমদমের অমৃত বাজারের মাছ বিক্রেতা তপন দাস। ৫০০ কেজি ইলিশ কেনেন। তিনি আরও কিছুটা কিনবেন জানান। গতবার পরে এসে ঠকেছেন, ইলিশ পাননি। গত বছর প্রথম দিকে উচ্চ দামের কারণে কেনা হয়নি, অবশ্য পূজার ঠিক আগে ইলিশ কিনতে এসে জানতে পারেন মাছ আসা বন্ধ।

গত বছর ৩ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টনের অনুমতি থাকলেও ভারতে যায় ৫৮৭ মেট্রিক টন। ফলে পূজার মুখে বহু খুচরো মাছ বিক্রেতা ইলিশ কিনতে পারেনি। এবারের প্রথমেই কলকাতার বিভিন্ন খুচরা মাছ বিক্রেতা নিজেদের সাধ্যমতো সংগ্রহ করেন বাংলাদেশের ইলিশ।

আগামী ২ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে কলকাতায় শুরু হচ্ছে পূজার মৌসুম। ১০ অক্টোবর বিজয়া দশমী। এরপর লক্ষ্মীপূজা, কালীপূজা ইত্যাদি। অপরদিকে আগামী ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ভারতে ইলিশ যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ। ফলে সব মিলিয়ে পূজায় মৌসুমে বাংলাদেশের ইলিশের স্বাদ নিতে এখন প্রস্তুত পশ্চিমবঙ্গবাসী।

এমটি/ এএটি

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email