অনলাইন ডেস্ক: চট্টগ্রাম বন্দরে অটোমেশন চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়ে নৌপরিবহন এবং বস্ত্র পাট উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, চট্টগ্রাম পোর্ট হচ্ছে বাংলাদেশের লাইফলাইন। এ পোর্ট যদি না চলে এবং যে অব্যবস্থাপনা ছিল সেটা যদি দূর না হয় আমাদের অর্থনীতির লাইফলাইনে অসুবিধা হবে। সে কারণে গত তিনদিন যাবত এ পোর্টের যাবতীয় কার্যক্রম পরিদর্শন করেছি। আমরা ম্যনুয়ালি থেকে যদি অটোমেশন করতে পারি তাহলে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সময় আরও কমে যাবে। আগে একটি জাহাজ আসলে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগতো পণ্য খালাস করতে। এখন সেটা অনেক উন্নতি হয়েছে। তাই বলে আমরা যে সন্তুষ্ট, তা একদম নয়। অটোমেশনের কাজ চলছে। সেটি হলে কনটেইনার লোডিং ও আনলোডিং এর সময় আরও কমবে।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন শেষে নিউমুরি কনটেইনার টার্মিনালে (এনসিটি) সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনদিনের সফর শেষে চট্টগ্রাম বন্দর, নৌবাণিজ্য ও সুনীল অর্থনীতি নিয়ে কথা বলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এখানে (চট্টগ্রাম বন্দর) অনেক অনিয়ম হয়েছে। সেগুলো বলতে গেলে সারাদিন লাগবে। অনেক লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। কারো মামা, কারো চাচা, কারো দাদা। তারা কাজ করছে না। লাইসেন্স নিয়ে হয়তো আরেকজনের কাছে বিক্রি করেছে। এগুলো আমাদের নজরে এসেছে। আমরা ব্যবস্হা নিচ্ছি।
চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম গতিশীল করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে (চট্টগ্রাম বন্দর) ২০ বছর আগের কনটেইনার পড়ে আছে। ১২-১৪ বছর ধরে গাড়ি পড়ে আছে। এগুলো নিলাম করার কাজ এনবিআরের (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। বন্দরের জায়গা যদি এভাবে ভর্তি হয়ে থাকে তাহলে কার্যক্রম কীভাবে বাড়বে। পোর্টের জায়গা যদি খালি না করে এত কনটেইনার আছে এগুলো আমরা রাখব কোথায়। ফিরে গিয়ে আমি এনবিআরের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলব। শুধুমাত্র বন্দর নয়, আরও যেসব সংস্থা আছে তাদেরকেও কাজ করতে হবে। যদি কাজ না করে তাহলে বন্দর কর্তৃপক্ষ কাজগুলো করতে পারবে না। আমাদের কাছে বিনিয়োগকারী আছে। তারা অটোমেশনে কাজ করতে চাই। পোর্ট অটরিটিই শুধু না, পোর্ট অথরীটির মধ্যে যেসব এজেন্সি আছে তাদেরও একসাথে কাজ করতে হবে।
বন্দরকে দুর্নীতিমুক্ত করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুর্নীতি থাকলে অবশ্যই বলবেন। এখানে অনেক অনিয়ম হয়েছে। সেটা বলতে গেলে সারাদিন লাগবে। অনেককে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। তারা কারও চাচা, ভাই বা মামা। এসবই কিন্তু আমাদের নজরে আছে। এ বন্দরকে জঞ্জাল মুক্ত করতে হবে। আর এটা যাতে কুইক রেসপন্স করতে পারে সেটার জন্য কাজ করতে হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে এ উপদেষ্টা বলেন, আমি বে-টার্মিনালের জায়গাগুলোও দেখে আসছি। আমি আপাতদৃষ্টিতে বে টার্মিনালে কোনো সমস্যা দেখছি না। এখানে বিনিয়োগ করার জন্য অনেকে বিদেশি বিনিয়োগকারী বসে আছে। আগামী বেশ কিছু বছর পরে এ টার্মিনালের যে সম্ভাবনা সেটা দেখতে পাব। আমাদের দিনদিন আমদানি-রফতানি বাড়ছে। সেগুলোও লোড-আনলোড করতে সমস্যা হবে না। এখানে সৌদি আরব, নেদারল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ বিনিয়োগ করেছে। বিনিয়োগকে যদি আমরা নিরুৎসাহিত করি তাহলে আমাদের এখানে কিন্তু বাইরের কেউ আসবে না। সিঙ্গাপুরের পোর্ট আর আমাদের বন্দরের মধ্যে কিন্তু তফাৎ আছে। তারা উম্মুক্ত। তারা অনেক এগিয়ে। বন্দরগুলোকে আমরা যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারি, বন্দরের ভেতরে যে অরাজকতা ও চোরাচালান আছে সেগুলো যদি বন্ধ করতে পারি তাহলে আমরা আরো বেশি আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারব।
এম সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, পোর্টের জন্য যেটা ভালো হবে সেটা করা হবে। টেন্ডার এখন আর ডিপিএম পদ্ধতিতে হবে না। এখন ওপেন দরপত্র আহবান করা হবে। সেটা আবার আমরা রিভিউ করব। যাতে লোকাল বা বিদেশির মধ্যে কোনো নির্দিষ্ট লোক যাতে না আসে।
উপদেষ্টা পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল, লালদিয়ার চর, বেটার্মিনালের প্রকল্প এলাকা এবং চট্টগ্রাম বন্দর এলাকা পরিদর্শন করে এনসিটি ইয়ার্ডে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
এ সময় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ মুহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মাহমুদুল মালেকসহ বন্দরের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এমটি/ এএটি