রাষ্ট্রপতিকে বিদায় না করলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না: দুদু
রাষ্ট্রপতির অপসারণ চায় না বিএনপি: সালাহউদ্দিন
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব
সেনাপ্রধান দেশে ফিরে আসার পরই হতে পারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

মহিউদ্দিন তুষার
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত মন্তব্যের রেশ ধরে মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারণ করতে চাপ বাড়ছে। গত মঙ্গলবার দিনভর বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। টানা ছয় ঘন্টা আন্দোলনের পর রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি করে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতির কুশপুতুল দাহ করেন ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে ‘মিথ্যাচার’ এবং ‘শপথ ভঙ্গের’ মত অভিযোগ আনার পর থেকেই তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার দাবিতে শক্ত অবস্থান নিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। অপসারণে জন্য বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম গতকাল বুধবার সচিবালয়ে বলেছেন, রাষ্ট্রপতির থাকা না থাকা সাংবিধানিক বিষয় নয়, এখন এটি রাজনৈতিক বিষয়। তার মতে, রাজনৈতিক সমঝোতা ও জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে এবং দেশের বর্তমান বাস্তবতায় রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিনের টিকে থাকাটা ‘কঠিন’ হয়ে পড়েছে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা । যেহেতু বিতর্কটা তারই সৃষ্টি। ফলে একে ঘিরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সে প্রেক্ষাপটে এখন তাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তিনি কী করবেন। রাষ্ট্রপতি নিজে থেকে পদত্যাগ করবেন, নাকি অন্তর্বর্তী সরকার তাকে অপসারণ করবে, এটাই এখন মূল আলোচনা। পদত্যাগ না করলে কীভাবে অপসারণ করা হবে, এটা নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা।

তবে সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগে জটিলতা আছে। সংবিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্যরা তাকে নিয়োগ দিয়েছেন। এখন তার নিয়োগকারী সংসদই নাই। এখন তিনি তার পদত্যাগপত্র কোথায় পাঠাবেন? তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার কোনো কর্তৃপক্ষ নাই। আবার অন্তর্বর্তী সরকার, যাদের তিনি নিয়োগ দিয়েছেন, তারা কীভাবে তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করবেন বলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। তিনি জানান, এখন তিনি পদত্যাগ করবেন কি করবেন না এটা রাজনৈতিক প্রশ্ন। যেহেতু সংবিধানে সুযোগ নাই। তাই রাজনৈতিক দলসহ সবার ঐক্যমতের ভিত্তিতে এটা হতে পারে। পরের সংসদ এসে এর বৈধতা দেবে।

রাষ্ট্রপতির অপসারণের ব্যাপারে ছাত্র-জনতাসহ বিভিন্ন সংগঠন শক্ত অবস্থানে থাকলেও বিএনপি অবস্থান কিছুটা অস্পষ্ট। দলের নেতারা পক্ষে বিপক্ষে বক্তব্য দিচ্ছেন। কেউ বলছেন রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ছাড়া দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না আবার কেউ বলছেন বিএনপি পদত্যাগ চায় না। রাষ্ট্রপতিকে বিদায় না করলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তাকে (রাষ্ট্রপতি) বিদায় করা জরুরি। যদি তাকে বিদায় না করে তাহলে কীভাবে বিদায় করতে হয় তা আমাদের জানা আছে। জাতীয় প্রেসক্লাবের আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাষ্ট্রপতি পদে শূন্যতা রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করবে, যা দেশে গণতন্ত্র উত্তরণের পথ বাধাগ্রস্ত করবে। এতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত হবে। তাই এই মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির অপসারণ চায় না বিএনপি। তবে ফ্যাসিবাদের দোসররা যেন কোনো ষড়যন্ত্র করতে না পারে সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি জানান, আমাদের অবস্থান তো আপনারা দেখছেন, যারা বিক্ষোভ করছে, তাদের বলেছি তারা যেন বঙ্গভবনের পাশ থেকে সরে যান। বঙ্গভবনের আশপাশের সিকিউরিটি বাড়িয়েছি। আইন উপদেষ্টার বক্তব্যে সরকার একমত পোষণ করেছে, তাহলে পরবর্তী ধাপ হিসেবে সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা বলতে পারি যে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত হয়নি।

বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টাই পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হতে পারেন কিনা এনিয়েও আলোচনা দেখা যায়। যদিও সরকারের কারও বক্তব্য বা বিবৃতিতে তেমন কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। আবার অনেকের ধারণা বিদেশে থাকা সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান দেশে ফিরে আসার পরই মূলত রাষ্ট্রপতি বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সফর শেষে শুক্রবার তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email