অনলাইন ডেস্ক: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আফসানা করিম রাচি নিহতের ঘটনায় ঘাতক রিকশা চালককে গ্রেপ্তারসহ ১১ দফা দাবিতে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদে তালা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অনুষদে প্রবেশ দরজায় তালা দেয় তারা।

এরপর অনুষদের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের ১১ দফা দাবির কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না দেখলে তারা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।

ইংরেজি বিভাগের ৫৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. আলী চিশতি বলেন, ‘আমাদের বোন রাচির মৃত্যুর প্রতিবাদে এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে আমরা ১১ দফা দাবি দিয়েছি। ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সামনে দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন তুলে ধরতে পারে নাই। আমরা শুনেছি মামলা হয়েছে কিন্তু পুলিশ যে তদন্তকাজ শুরু করেছে এর কোনো প্রমাণ পাই নাই।’

চিশতি বলেন, ‘আমরা জানি যে, সব দাবিগুলো একদিনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব না কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমাদের সামনে দৃশ্যমান কিছু পদক্ষেপ তুলে ধরতে হবে। আর না হয় আমাদের এই অবস্থান কর্মসূচি চলবে।’

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- অটোরিকশা চালককের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা; ৭ কর্মদিবসের মধ্যে সিন্ডিকেট মিটিং ডেকে জাবি মেডিকেল সেন্টারে মুমূর্ষু ব্যক্তির পর্যাপ্ত চিকিৎসার সুব্যবস্থার গ্রহণ; রাচিকে মরণোত্তর ডিগ্রি দিতে হবে এবং রাচির মৃত্যুর জন্য তার পরিবারকে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; অটোরিকশা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিতে হবে; সম্পূর্ণ ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং পর্যাপ্ত পরিমাণের আলোর ব্যবস্থা করতে; পর্যাপ্ত পরিমাণের নিরাপত্তা কর্মী রাখতে হবে; রাচির স্মরণে ক্যাম্পাসে স্থায়ী স্মৃতিফলক নির্মাণ করতে হবে এবং নির্মাণাধীন সেন্ট্রাল লাইব্রেরির একটি অংশের নাম রাচির নামে করতে হবে; কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী এবং ৫৩ ব্যাচের কয়েকজনকে তদন্ত কমিটিতে পর্যবেক্ষক হিসেবে রাখতে হবে এবং সব দাবি মানা হচ্ছে কিনা সেই বিষয়ে অবগত করতে হবে; আফসানা করিম রাচির বিদায়ী আত্মার মাগফিরাত কামনার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে দোয়া মাহফিলের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে; রাস্তার মোরে সাইড মিররের ব্যবস্থা করতে হবে এবং ফুটপাত নির্মাণ করতে হবে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, আমরা সবার আগে চেষ্টা করছি অপরাধীকে শনাক্ত করে তার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতিমধ্যে এই ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। আর শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো খুবই যৌক্তিক, ইতিমধ্যে আমরা অটোরিকশা ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করেছি এবং বাকি দাবিগুলো বাস্তবায়নেও কাজ করছি।

শিক্ষার্থী আফসানা করিম রাচির মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু সৈয়দ বাদি হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মাসুম শাহরিয়ারকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু সাঈদ মো. মোস্তাফিজুর রহমান, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিনা ইসলাম, মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আরিফুল হক এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রার (সাধারণ প্রশাসন) মো. মাহতাব-উজ-জাহিদ।

এমটি/ এএটি

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email